এগারোদিন। -উম্মে হাফসা।
এগারোদিন।
-উম্মে হাফসা।
০১.
যা চাই নাই নাই
জীবন তো মানে না
চলে জীবনের খেলা।
ঘোড়ার আড়াই প্যাঁচ বুঝলি। হু। ছাই বুঝছো আমার। আড়াই প্যাঁচ মানে ঘোড়া আড়াই ঘর অবধি যেতে পারবে। এতগুলো বছর কেটে গেলো তবুও দাবা খেলা শিখতে পারলে না। এই যে দাবার ঘর দেখছো, সাদা-কালো এইটা মানুষের জীবন। হ্যাঁ, ঠিক এইরকম। মানুষের জীবন কখনওবা রঙ্গিন আবার রংহীন। হঠাৎ করে বাবার মুখে এসব কথা শুনে চমকিয়ে গেল রুয়েল। ছোটবেলা থেকে দেখে আসছে বাবা সবসময় দাবা ঘুটি কোর্ট নিয়ে বসে থাকে। মাঝেমধ্যে এ পাড়ার সতীশ কাকা আর ওই পাড়ার রিয়াজ কাকার আনাগোনা হয় তাদের বাড়িতে। সারাদিন চলে খেলা, গল্প আড্ডা। তবে সেদিন তার বাবার ঘরে প্রবেশ নিষেধ। কারণ বড়দের কথা নাকি ছোটদের শুনতে নেই। তবে যেদিন সতীশ আর রিয়াজ কাকা আসেন সেদিন বাড়ির পরিবেশ বদলে যায়। সবাই কেমন জানি নিশ্চুপ হয়ে যায়। বাবাও গম্ভীর হয়ে যান। তারা এসেই বাবার ঘরে ঢুকে। আর কোন শব্দ পাওয়া যায় না। কেন এই গম্ভীরতা তা বুঝে পায় না রুয়েল। তবে সেদিন আর তার বড় হতে ইচ্ছে করে না। বড় হলে তাকেও যদি গম্ভীর হতে হয়। অজানা এক ভয় তাকে গ্রাস করে ফেলে। তবে বাবার কয়েকটা বন্ধু টাইপের লোক আসে যাদের সাথে বাবা জম্পেশ আড্ডা দেয়। এদের দেখলে ভীষণ ভালো লাগে রুয়েলের। তখন খুব ইচ্ছে করে বড় হতে। তবে এরা আসলে একদিক দিয়ে রুয়েলের ভালোই হয়। সেদিন আর তাকে বাবার সামনে দাবার ঘুটি নিয়ে বসতে হয় না। তাছাড়া প্রতিদিন তাকে নিয়ম করে দুইবেলা বাবার সাথে খেলতে হয়। এই বদ্ধ জীবন তার মোটেও ভালো লাগে না। তার ইচ্ছা করে পাড়ার ছেলেদের সাথে ঘুড়তে, দলবেঁধে কাবাডি খেলতে, সাঁতরিয়ে নদী পার হতে। বাবা আবারো বললেন, কথা কি কিছু কানে যাচ্ছে? হু বলেই উঠে পড়ল রুয়েল। তার আর এখন বাবার সঙ্গ ভালো লাগছে না। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেবার জন্যে পা বাড়াল বাড়ির বাইরে যাওয়ার পথে। ওমনি এক নারী কণ্ঠে আওয়াজ শুনা গেল। বলছে, এই ভরদুপুরে কোথায় যাওয়া হচ্ছে। দু’দন্ড বাড়িতে বসা যায় না? ছোট বোনটি কান্না করছে সেদিকে চোখ যায় না। বাপে পাইছে এক দাবা আর ছেলেটা হইছে উদাসী। আল্লাহ! তুমি আমারে কোন সংসারে নিয়ে এসে ফেলাইছো। কপাল! সব আমার পোড়া কপাল এর দোষ! চলতেই থাকে বিলাপ করা। রুয়েল এতে বিরক্ত হয় না। এসব ওর মুখস্ত। এরপরে কী বলবে সে, তা জানা রুয়েলের। কি অদ্ভুত মানুষ! কত সহজে মিথ্যা কথা বলে দেয়। যেমন তার ছোটমা। এই মহিলাটা তার আপন মা না। তার মা তো জন্মের দুইবছর পর তাকে রেখে মারা গেছে। কি অদ্ভুত এখন তার বয়স চৌদ্দ কি পনেরো। রুয়েল খেয়াল করেছে আজকাল সে খুব অল্পেই মুগ্ধ হয়। সবকিছুই তার অদ্ভুত লাগে। যেমন তার ছোটমা। যাকে সবসময় সে নতুন ভাবে নতুন রূপে আবিষ্কার করে। তবে এতে তার ভালোই লাগে। একঘেয়েমি দূর হয়।
০২.
যেদিকে তাকাই দেখি শুধু যন্ত্রণা
তারপর একবুক পথচলা
উড়ে যাওয়া, ভেসে যাওয়
হেসে খেলা।
গ্রামের নাম রূপসী। কি আজব নাম! গ্রামের নাম আবার রূপসী হয় নাকি? ভেবে পায় না রুয়েল। তবে তাদের গ্রামের জন্য কোন যুক্তিযুক্ত নাম এ পর্যন্ত রুয়েল খুঁজে পাইনি। তাই রূপসী নামটাই তাকে মেনে নিতে হয়েছে। মনেমনে রুয়েল একটা নাম খুঁজছে। পেয়ে গেলেই রূপসী নামটা বাতিল করে দিবে তার মনের ঘর থেকে। এতকাল ধরে শুনে এসেছে কোন নারীকে সুন্দর লাগলে তাকে সবাই রূপসী নারী বলে। তাহলে তাদের গ্রাম কি একটা নারী? হঠাৎ থেমে যায় রুয়েল। তার বির্তক ভালো লাগে না। তাই আপাতত বিদ্রোহী মনকে থামিয়ে দেওয়াই ভালো।
রুয়েলের ইচ্ছে করে খাঁখাঁ করা চৈত্রের দুপুরে বহু পথ পাড়ি দিতে। কিন্তু পথে তার নন্টের সাথে দেখা হয়ে যাওয়ায় বহুপথ আর তার পাড়ি দেওয়া হয় না। নন্টে তাকে দেখে দাঁতকেলিয়ে বলে, কিহে জমিদার বাবু কোথায় যাওয়া হচ্ছে ভরদুপুরে? নন্টের দাঁত যেন কতকাল ব্রাশ করা হয়নি হলুদ দাগ পড়ে গেছে দাঁতে। অথচ রুয়েল দুইবেলা ব্রাশ করে নিয়মকরে। কত তফাৎ মানুষের জীবনে। রুয়েলের থেকে কোন উত্তর না পেয়ে নন্টে আবার বলতে লাগল, কিহে ওস্তাদ মাধবীর সাথে ক্যাঁচাল হয়েছে নাকি? ধ্যান কই তোমার? রুয়েলের হঠাৎ করে নন্টেকে বিরক্ত লাগছে। মাধবীর প্রসঙ্গ আসলেই আর কারোর সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে না। তাই প্রসঙ্গ বদলাতে নন্টেকে জিজ্ঞাসা করে, তুই কোথায় যাচ্ছিস? নন্টে যেন এই প্রশ্নের অপেক্ষায় ছিল। বুক ফুলিয়ে ইশারা করল হাতে থাকা লাঠির দিকে। রুয়েল এতক্ষণে খেয়াল করল, নন্টে আজ ব্যতিব্যস্ত। নন্টে একাই বলা শুরু করল, শালারা আমার বাপের গায়ে হাত দিছে, ভুঁই এ গেছে আব্বা আর শালারা আব্বাক একা পেয়ে ভুঁই দখল করবার চায়। আব্বার গায়ে হাত তুলছে। রক্তের বদলে রক্ত তুলব নইলে আমার নামও নন্টে নয় এ আমি বলে গেলাম তোমার কাছে। জাম্বুদের আসতে বলছি, ওরা এসে পড়ল প্রায়। আমি গেলাম তুমি ভরদুপুরে রৌদে ঘুইরো না আবার জ্বর বাঁধাবে।
রুয়েলের মনে পড়ে নন্টের একটা নাম আছে ভালো, ইমরান আহম্মেদ!
আজ শুক্রবার, জুমাবার। এই গ্রামের মানুষ বেশ খোদাভীরু। মুখে সবসময় পীর আউলিয়ার নাম জপতে থাকে। সপ্তাহের এই একটা দিনে জুমআর নামাযে লোকের ভীড় পড়ে যায়। ছোট বড় সবাই যাই মসজিদের দিকে। বাকি ছয়দিন আর শুক্রবারের বাকি চার ওয়াক্ত কোনদিক দিয়ে তাদের কেটে যায় কেউ বুঝে না। রুয়েল কখনো তার বাবাকে মসজিদে যেতে দেখেনি। তবে বাবা খোদাভক্ত। প্রতিবছর বাড়িতে বাৎসরিক মিলাদ-মাহফিলের আয়োজন করেন। হাজার লোকের সমাগম ঘটে। আহা! কি তৃপ্তি!রুয়েল ডান পা দিয়ে মসজিদের গেটের দিকে পা বাড়াল, মনে মনে পড়তে লাগল, আউযুবিল্লাহিল আযিম ওয়া বিওয়াঝহিহিল কারিম ওয়া সুলতানিহিল ক্বাদিমি মিনাশ শায়তানির রাঝিম। বিসমিল্লাহি ওয়াস-সালাতু ওয়াস-সালামু আলা রাসুলিল্লাহ, আল্লাহুম্মাগফিরলি জুনুবি, ওয়াফ-তাহলি আবওয়াবা রহমাতিকা। (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)অর্থ : ‘আমি মহান আল্লাহর, তাঁর সম্মানিত চেহারার এবং তাঁর চিরন্তন কর্তৃত্বের মাধ্যমে বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ (আবু দাউদ) আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি। সালাত ও সালাম রাসুল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর। হে আল্লাহ! আপনি আমার গোনাহগুলো ক্ষমা করে দিন এবং আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাগুলো খুলে দিন।’ রুয়েলের সাথে ইমাম সাহেবের ভালোই ভাব। কারণ, রুয়েল নিয়মমতো মসজিদে সালাত আদায় করে। মসজিদে প্রায় ষাট সত্তর লোকের সমাগম। রুয়েলের মনটা খুশিতে ভরে উঠে। আহা এমন যদি প্রত্যেকদিন হতো তাহলে কতো ভালো হতো। যথাসময়ে ইমাম নামায শুরু করল, আল্লাহ্ আকবর। কি মধুর সেই কন্ঠ। নামায শেষে খুতবা শুনা সব মিলিয়ে এক প্রশান্তি যেন ছেঁয়ে যায় সমস্ত দেহে। অশেষ এক কুদরত আছে নামাযের মধ্যে। রুয়েলের হঠাৎ করে একটা কথা মনে পড়ে,
“জলের মধ্যে জল পড়লে যেমন বুঝা যায় না তেমনি মুখোশের আড়ালে থাকা অমানুষকে অতি সহজে ধরা যায় না।”
০৩.
চলতি পথে আসে নানান বাঁধা,
বাঁধা পেরিয়ে হঠাৎ হয় দেখা,
সুখ-দুখ, হাসি-কান্না
একি পথে চলে তারা।
সকাল থেকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে। মাঝেমাঝে রোদের ঝিলিক দেখা যাচ্ছে। গ্রাম বাংলায় একটা বুলি আছে, রোদ হয় বৃষ্টি হয় খেঁকশিয়ালের বিয়ে হয়। আচ্ছা খেঁকশিয়ালের বিয়ে টা হয় কার সাথে? খেঁকশিয়ালির সাথে বলেই একমনে হেঁসে উঠে রুয়েল। রুয়েল কে হাসতে দেখে রুকু হাসতে শুরু করে। রুকাইয়া রুয়েলের ছোট বোন। রুয়েল আদর করে রুকু বলে। এদের দেখে কখনো বুঝা যায় না, এরা দুই মায়ের সন্তান। রুকুর বয়স ছয় বছর। মেয়েটা প্রতিবন্ধী। তবে তার স্মৃতিশক্তি প্রখর। হাতে ও পায়ে আঙ্গুল সংখ্যা বেশি। স্বাভাবিক ভাবে প্রত্যেকের বিশটা আঙ্গুল হাতে ও পায়ে সেখানে ওর সাতাশটা। দুই হাতে চারটা বেশি আর পায়ে তিনটা। এইটা রুয়েলের কাছে কোন সমস্যা বলে মনে হয় না। কিন্তু দেখা যায়, যে দেখে সেই বলে আহারে এত সুন্দর মেয়ের একি অবস্থা? আল্লাহ তুমি এই মেয়ের রূপ দিয়েছো কিন্তু অক্ষমতাও দিয়েছো এই জন্যেই তো বলে সর্বসুখ সবাই পায় না। এইজন্যেই তো মেয়েটার এই অবস্থা। মায়ের দোষ গো বুঝলে, মায়ের দোষ। অন্যের সংসার এইভাবে দখল করে নিয়েছে। এমন তো হবেই। আহারে বেচারি রুয়েলের মা! খুব ভালো মানুষ ছিল। কিন্তু স্বামীর সংসার তার কপালে ছিল না। আল্লাহ এ তোমার কেমন বিচার। আল্লাহর লীলাখেলা বুঝা দায় বাপু, বুঝা দায়। রুয়েলের এসব খুব বিরক্ত লাগে খুব রাগ হয়। কিন্তু প্রকাশ করতে পারে না। তবে বোনকে নিয়ে কেউ কটুক্তি করলে ঠিক থাকতে পারে না।
বোন বলতে সে অন্তঃপ্রাণ।
রুকুর হাসি যেন থামে না। রুকুর দিকে তাকিয়ে রুয়েল জিজ্ঞেস করে, কিরে হাসতেছিস কেন বনু? তুমি হাসছো তাই। ওহ, তাই। তাহলে আমি কান্না করলে তুইও কাঁদবি? না, আমি আগে চেষ্টা করবো যাতে তোমার কাঁদতে না হয়। তারপরেও যদি কাজ না হয়, তুমি কান্না করো তাহলে আমি তোমাকে হাসানোর ব্যবস্থা করব। মজার মজার গল্প বলব যাতে তুমি হাসো। আমি কি বাচ্চা নাকি যে গল্প শুনে হাসব। তাহলে আমিও তোমার গলা ধরে বসে কান্না শুরু করে দিব। পরে মা এসে দুজনকে আদর করে দিবে কেমন। দুজনেই হাসিতে মেতে উঠে। এ হাসি যেন থামার নয়, বড় অদ্ভুত সুন্দর হাসি। পৃথিবীতে হাসির থেকে সুন্দর কিছুই নেই আর একমাত্র মানুষের ক্ষমতা আছে হাসার। বড়ই অদ্ভুত সব।
মিতার সাথে দেখা নেই পাঁচদিন অথচ মন বলছে কত বছর ধরে দেখি না। মাধবীকে সেদিন মিতার কথা জিজ্ঞেস করায় গাধীটা বলে কী? – আমি কিছু জানি না, খোঁজ নেওয়ার নিজে গিয়ে নাও বলেই দিল একছুট। পাত্তাই দিল না। আজকাল কেউ কথা শুনে না। এক গভীর নিঃশ্বাস ফেলে পা বাড়ালো রুয়েল মিতার বাড়ির পথে। বৃষ্টি নেই টানা পনেরদিন, খরা হচ্ছে। ধানের জমি শুকিয়ে কাঠ। কৃষকের মাথায় হাত। এমন অবস্থায় কী করা যেতে পারে? এবার যদি ফসল ফলাতে না পারে তবে নুন আনতে পান্তা ফুরায় এমন অবস্থা হবে। দু’হাত তুলে আল্লাহকে ডাকা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। আল্লাহ রহম করলেই হয়। লোকে বলাবলি শুরু করছে সব পাপের ফল, গ্রামডা পাপ দিয়ে ভরে গেছে। এহন এই পাপ মোচনের জন্য পীর সাহেবকে আনা দরকার। বছর তিন ধরে গ্রামে পীর সাহেব আসে না, হয় না মিলাদ মাহফিল তাই এই দশা। পীর সাহেবের মারা যাবার পর থেকেই তার ছেলে পীর বনে গেছে। রুয়েল কখনো পীর সাহেবকে দেখেনি। পীর সাহেবের ছেলের নাম সাইমন। তবে তার নামধরে কেউ আর ডাকে না, হুজুরসাব প্রচলন হয়ে গেছে। তাগড়া জোয়ান পুরুষ। এই হুজুরসাবকে রুয়েলের মোটেও ভালো লাগে না। ভালোলাগা গুলো রংহীন আবারো কখনো রঙ্গিন, এলোমেলো ছন্নছাড়া।
হুজুরসাব গ্রামে এসেছেন, উঠেছেন মিতাদের বাড়িতে। দলেদলে ভীড় জমছে হুজুরসাবের কুদরতই হাতের ছোঁয়া পেতে। মাথায় হাত রেখে আল্লাহর নাম নিয়ে দোয়া করে দেন হুজুরসাব। যার মাথায় হাত পড়ে তার মনবাসনা পূরণ হয়ে যায়। লোকে হুজুরসাবকে সন্তুষ্ট করার জন্য এটাওটা নিয়ে যাচ্ছে। হুজুরসাব তবে এতে কিঞ্চিৎ রাগ দেখিয়েছেন তবে একেবারেও নিষেধ করেনি। তিনি বলেছেন, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বান্দা ইবাদত বন্দেগি করেন……। নারীপুরুষ একত্রে বসে আছে হুজুরসাবের কাছে। বিষয়টা খুব বিরক্ত লাগছে রুয়েলের। রুয়েলের ছোটমা নাকি হুজুরসাবের দোয়া নিতে গিয়েছিল খবরটা মিতা দিয়েছে রুয়েলকে। পথেরধারে বসে লোকের আসা যাওয়া দেখছে রুয়েল। হুজুরসাব বলছেন এগারো দিনের মাথায় বৃষ্টি হবে এবং সে এখানে এগারো দিনই থাকবে একদিন বেশিও না একদিন কমও না। এরমধ্যে রায়ান কাকার ছেলে রানু ভাই নাকি বলেছে, এগারোদিনে তো বৃষ্টি হতেই পারে আপনার এত ক্ষমতা এহন বৃষ্টি করে দেহান তাইলেই আপনাক পীর আউলিয়া হিসেবে মানব। তাছাড়াও আমি কইতে পারি যে আজ থেকে দশদিন পর বৃষ্টি হইবো। উপস্থিত অনেকে নাকি রেগে গেছেন রানু ভাই এর উপর। এই খবর নিয়ে এসেছে আরিফ ঘটনাটা ঘটেছে গতকাল। আর আজ এইটা নিয়ে আলোচনা সভা বসেছে আরিফ, রুয়েল, মিতা, মাধবী, নন্টে আর জাম্বুর মধ্যে। এর মধ্যে জাম্বু, মিতা হুজুরসাবের পক্ষে তাদের মতে রানু ভাই ভুল কথা বলছে, তার ক্ষমা চাওয়া উচিত আর তওবা করা উচিত। বাকিরা পীর সাহেবের বিপক্ষে। আড্ডা বেশ জমে উঠেছে। কিন্তু নিমিষেই সব উধাও হয়ে গেল। আর্তনাদে রূপসী গ্রামের বাতাস যেন ভারী হয়ে যাচ্ছে, প্রকৃতি হয়ে গেল থমথমে। রানু ভাই মারা গেছে, জ্বীন নাকি ভর করেছিল। পুকুরে পানি শুকিয়ে গেছে তবে প্রায় হাঁটু সমান কাঁদা, মাছ ধরছিল রানু ভাই। তার মা ডাকতে এসে দেখে মুখ কাঁদায় গুজা। রানু ভাই এর মায়ের আহাজারি দেখে রুয়েলের মনটা কেঁদে উঠল। একদল লোক বলছে, হুজুরসাবের সাথে তক্ক করা, কি হলো শেষে? সোনার টুকরা ছেলে ছিল! ইশরে কী হলো? হুজুরসাব এসেছেন, জনতার দিকে তাকিয়ে বললেন, ভাইসাব নাফরমানি কইরেন না। রুয়েলের মনে একটাই কথা উঁকি দিচ্ছে।
“সুখ উড়ন্ত পাখি, আজ আমার ঘরে তো কাল অন্যের ঘরে। স্থায়ী নয়, তাহলে এই উড়ন্ত পাখির বাসা কোথায়?
০৪.
দূর অজানায় পাড়ি দেই
সুখের লাগি, সুখ নেই
নেই হাসি, আছে অভিনয়
মুখোশ পড়ে আছে সব।
আজ পাঁচদিন হুজুরসাব এসেছেন। সবকিছু বদলে গেছে। নন্টের এখন ইচ্ছে করছে হুজুরসাবের মাথা ফাটাই দিতে। কিরকম খারাপ ভাবা যায়, মেয়েদের দিকে বাজে ভাবে তাকায়, হাত ধরে দোয়া করার নামে। জোতচ্চোর একটা। নন্টে রুয়েলকে উদ্দেশ্য করে বলল, এই বেয়াদবরে সমাজ থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে হবে। সমাজের জন্যে এইগুলো ক্ষতিকর। পাশাপাশি ধর্মের জন্যেও। ধর্মের আগাছা এগুলো, এদের জন্যে বদনাম ছড়ায়। বেশ উত্তেজিত মনে হচ্ছে নন্টেকে। মাধবী কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, আমার কথা একটু শুনলে ভালো হইতো। আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে যাব। যে সাহায্য করবি সে হ্যাঁ, বল না হলে আমি আমার পথ দেখে নিব। রুয়েল চমকে উঠে বলল, তোর আবার কী হইছে? ওই হুজুর তোর সাথে কিছু করেছে? মাধবী চুপ থেকে বলল, আমার ব্যক্তিগত সমস্যা সবাইকে বলতে ইচ্ছুক নই। নন্টে বলল, আমাদের বল। আমরা তো সবাই বন্ধু একসূত্রে গাঁথা। সবাই অনেক সময় ধরে মাধবীবে বুঝিয়ে যে যার মতো চলে গেল। মাধবী মৃদু হেসে বলল, জন্ম দিলেই পিতা হওয়া যায় না, কিছু কাণ্ডজ্ঞানহীন পিতামাতা আছে এরা সন্তানের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দেয়। একলা পথে একলা পথিক মাধবী, মনোবল হারালে চলবে না অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে যে তাকে।
মাধবীর কোন খোঁজ নেই, মিতা রুয়েলকে দোষ দিচ্ছে। ওর ধারণা রুয়েল সব জানে, মাধবীর সবথেকে ভালোবন্ধু রুয়েল তাছাড়া মাধবী রুয়েলকে বড় ভাইয়ের চোখে দেখে। হুজুরসাব লোকজন নিয়ে বসেছে, উনি আজ আয়নায় দেখবেন মাধবী কোথায় আছে কার সাথে পালিয়েছে? নন্টে রুয়েলের কানেকানে বলছে, ভাই এরে তো আয়নাবাবা নাম দেওয়া উচিত বলেই মুখচাপা। রুয়েল একমনে তাকিয়ে আছে হুজুরসাবের দিকে, ঘৃর্ণায় ওর দু’চোখ ভরে গেছে। একটা লোক কতটা খারাপ হতে পারে! সেদিন ছোটমাকে লোকটার সাথে যথেষ্ঠ ছন্নছাড়া ভাবে বসে থাকতে দেখে রুয়েলের কথা বলার শক্তি হারিয়ে গেছে। বেশ বুঝতে পারছে, যার কাজ নীচ তার মন ও নীচ। এখন হয়তো উনি মাধবীকে নিয়ে বাজে কিছু বলবেন যা শুনতে মোটেও ভালো লাগবে না। হুজুরসাব বলা শুরু করেছেন, মাধবীকে উনি দেখতে পাচ্ছেন আবছা আবছা পাশ থেকে মাধবীর মা বললেন কই আমিতো দেখতে পাই না। হঠাৎ রুয়েল এগিয়ে গেল স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আয়নায় কেউ নেই, তবুও বলতে লাগল হুজুরসাব আমি দেখতে পাচ্ছি। ওইযে, বুঝছি আপনার কথা অমান্য করায় আপনার জ্বীনরা মাধবীকে শাস্তি দেবার জন্যে জ্বীনেদের রাজ্যে নিয়ে গেছে। ঠিক না?
হুজুরসাব কিছু বলার আগেই রুয়েল চিৎকার করে বলল, নাফরমানি করিও না কেউ। মনেমনে মৃদু হেসে বলল, মাধবী যেখানেই থাকিস ভালো থাকিস, তোর অপমান এর শোধ নেওয়া সম্ভব না কারণ আমি মানুষ!
হুজুরসাবের দেখা পাত্রের সঙ্গে মিতার বিয়ে হয়ে গেছে। আজ দশদিন বৃষ্টির নাম গন্ধ নেই। কিন্তু রুয়েলের জীবনের সবথেকে বিচ্ছিরি ঘটনাটা ঘটে গেছে। ছোটমাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে হুজুরসাব ও তার চেলারা নিখোঁজ। ছোটমা একটা চিঠি রেখে গেছে। চিঠিতে লেখা,
প্রিয় রুয়েল,
আমাকে ক্ষমা করে দিও, তোমার বাবার মতো একজন খুনীর সাথে আমার পক্ষে সংসার করা সম্ভব না। আমি তোমাকে বলছি সে তোমার মায়ের খুনী। আমি তোমাকে যথেষ্ট স্নেহ করি। সাইমনের সাথে আমি ভালো থাকব। তোমার ছোটবোন রুকাইয়াকে অসুখে রেখো না।
ইতি,
তোমার ছোটমা।
সকাল থেকে চিঠি নিয়ে বসে আছে রুয়েল। গ্রামে রটে গেছে রুয়েলের মা পালিয়েছে। দুহাতে কান চাপা দিয়ে বসে আছে। দূরে ব্যাঙ ডাকছে। ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ, ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ।
সকালথেকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে, বারান্দায় বসে দাবা খেলছে বাবা আর রুকু। বৃষ্টির দু’এক ফোঁটা তাদের গায়ে পড়ছে। রুয়েলের হঠাৎ মনে হলো আজ এগারোদিন হবে। বাবাকে উদ্দেশ্য করে রুয়েল বলল, বাবা শুনছো? হু। বাবা মা বাড়িতে নেই, লোকে বলছে হুজুরসাবের সাথে চলে গেছেন। চিঠির কথা গোপন রেখে দিল। বাবা হেসে বললেন, ওরে আমার নৌকাটা খাওয়া গেল যে। রুকু মৃদু স্বরে বলল, ভাঙ্গা ঘাটে নৌকা ভীড়ে না। হঠাৎ ঝড় শুরু হল যেন কালবৈশাখী!
চায়ের কাপ দিয়ে ধোঁয়া উড়ছে। একফোঁটা, দুইফোঁটা থেকে হাজারটা ধোঁয়া, দৃশ্যমান আবার কিছু অদৃশ্যমান। দেখতে মন্দ লাগছে না। ঘড়ি ধরে খেয়াল করছে ঠিক কতক্ষণ গরম চা থেকে ধোঁয়া উড়তে পারে। ঠিক ওইসময়টুকু মানুষ আনন্দে হেসে খেলে পাড় করে। তা হতে পারে প্রতিদিন আবার কারোর জীবনে একবার। এই পর্যন্ত তিন কাপ চা অর্ডার করেছে প্রান্ত। আজকে মনটা ভীষণ খারাপ। কোন কাজে মন বসবে না। তাই মানুষের এই সুখ দুঃখ বের করার কাজে নেমেছে সে। চার নাম্বার চা অর্ডার করার জন্যে উঠতেই প্রান্তের চোখ পড়ল আশপাশের কয়েক জোড়া চোখ ওর দিকে তাকিয়ে আছে। যদিও এই দোকানে তেমন লোক বসে না। প্রান্তদের পাড়ার মোড়ের দোকান এইটা। ভার্সিটির বড় ভাইয়েরা মাঝে মধ্যে এসে বসে আর পাড়ার বেকার ভাইয়েরা তাছাড়া কাউকে তেমন দেখা যায় না। ওর দিকে কেউ তাকিয়ে রয়েছে এতে একটুও বিরক্ত হয় না প্রান্ত। এতে বেশ মজাই পায় সে। ইচ্ছে করে উল্টাপাল্টা কিছু একটা করে ফেলুক আর মানুষ বিস্ময় ভরে তা দেখুক। দোকানের ক্যাশে বসা ছেলেটির পাশে দাঁড়ায় প্রান্ত। ক্যাশে বসা ছেলেটি চার নাম্বার চায়ের কাপ এগিয়ে দেয়। প্রান্ত চায়ের কাপে চুমুক দেয়। এবারের কাপ দিয়ে কোন ধোঁয়া উড়ছে না। চা নয় যেন শরবত। প্রান্ত বেশ বুঝতে পারে এটা ক্যাশে বসা জাভেদ ভাইয়ের চালাকি। এই দোকানে দুইজন বসেন। একজন মালিক অন্যজন মালিকের ছেলে। জাভেদ ভাই মালিকের ছেলে তাই তাকে কর্মচারী বলা চলে না। চায়ের কাপে দ্বিতীয় চুমুক দিয়ে প্রান্ত বলে, তারপর বলো তোমার এই অবস্থা কেন? গণিতের ছাত্র তুমি, অনেক জটিল হিসেব খুব সহজেই করে দাও আর শেষে কী না চায়ের দোকানের ক্যাশিয়ার হয়ে গেলে। জাভেদ মুচকি হেসে বলে আমার বিষয়ে সবই জানো তুমি। বরং তোমার কী হয়েছে তাই বলো? আজ তোমার গল্প বল, শুনতে বেশ ভালো লাগে। যতবার শুনি ঠিক ততবার মুগ্ধ হয়। গল্প শেষে মুখে বিষণ্ণতার ছায়া লেগে থাকে। এক ঘোরের মধ্যে চলে যাই। কলেজ দাপানো স্টুডেন্ট ছিলে তুমি, সব বিষয়ে অলরাউন্ডার। বন্ধুদের সাথে আড্ডা, তোমার দিনগুলো বেশ রঙ্গিন। আর আমাকে দেখো, একেবারে উদাস। জাভেদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে, একসময় অনেক লাফিয়েছি তো এইজন্যেই দেখো এখন পঙ্গু হয়ে ঘরে বসে আছি। হুট করে রেগে যায় প্রান্ত। ধমকের স্বরে বলে, তোমাকে কতবার বলেছি নিজেকে পঙ্গু বলবে না। তোমার যা মেধা তা কয়জনের আছে আমাকে দেখাও। পারবে না দেখাতে, কারণ আমাদের আশেপাশে তোমার মতো সৎ, মেধাবী ছেলে একটাও নেই। মেধাবী থাকতে পারে হাজারটা কিন্তু সৎ মানষিকতা, খুব অভাব ভাইয়া, খুব অভাব। ঠিক আছে বুঝলাম, তোমার মুখে যে দেখছি চার আঙ্গুলের দাগ বসে গেছে। হু, মা এসেছে গতকাল। ভাইয়া তোমাকে একটা গল্প শোনাব কোন এক বৃষ্টিমুখর বিকেলে। সেদিন আর আমার কোন পিছুটান থাকবে না। আজ বিল টা রাখো ভাই আমি আসি। বাড়ি ফিরতে দেরি হলে মা চিন্তা করবে।
প্রান্তদের বাড়ি থেকে জাভেদ ভাইয়ের চায়ের দোকান মিনিট সাতের পথ। বাড়িটা তাদের নিজেদের নয়। তারা এখানে ভাড়াটিয়া, বাবার চাকরিসূত্রে এখানে থাকা। বাবার মুখে শুনেছে তাদের বাপ- দাদার ভিটা পুব অঞ্চলে। সেদিকে নাকি অনেক বড় বন্যা হয়। মা অবশ্য বাবাকে রাগানোর জন্যে মাঝেমধ্যেই বলে, বুঝলি প্রান্ত তোর বাবা তো আগে বাদাম বেঁচে খেত। কী করে যে ডাক্তার হয়ে গেল বলেই মা হেসে উঠে। হাসি থামিয়ে আবার বলতে শুরু করে, কিন্তু এখন দেখ, নিজের সংস্কৃতি, শিকড় সব ভুলে সাহেব হয়ে গেছে। একবারের জন্য প্রয়োজনবোধ করে না নিজের গ্রামে যাওয়ার, তার মন কাঁদে না। দিব্যি সংসার করছে, সুখে আছে। মায়ের কথা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনে প্রান্ত। তার মা ভীষণ মিষ্টি করে কথা বলে। মায়ের নামটাও ভীষণ মিষ্টি, জান্নাত। প্রান্তের মনে হয় মা মানেই ভালোবাসা। যদি সুন্দর করে কথা বলার প্রতিযোগিতা হতো তবে প্রান্ত নিশ্চিত তার জয়ী হতো। মায়ের সান্নিধ্য তেমন পাওয়া হয় না প্রান্তের। মা ব্যস্ত মানুষ, চাকুরী করেন। ছোটবেলা থেকে সে একা বড় হয়েছে, নিজের মতো করে। কেউ ও কে বলেনি এটা করো না এটা খারাপ। ভূতের ভয় দেখিয়ে কেউ খাবার খাওয়াইনি, সে একাই খেয়েছে। ঘুম পাড়ানী মাসি পিসিদের ছাড়াই ঘুমিয়েছে। নিজেই তৈরি করেছে নিজের জগৎ। সে জগৎ এর একটা নাম দিয়েছে প্রান্ত। মনোরাজ্য। সে রাজ্যের রাজাও প্রান্ত আবার প্রজাও প্রান্ত। মাঝমধ্যে ইচ্ছে করে বাবা-মাকে মনোরাজ্যে প্রবেশ করাতে কিন্তু খুব ভয় তাঁরা যদি রেগে যান, তাহলে কী হবে? তাই আর প্রান্তের মনোরাজ্যে কারো সংখ্যা বাড়ে না। সে একাই বসবাস করে। চাকরিসূত্রে মা থাকেন দিনাজপুর আর বাবা বগুড়ায়। প্রান্ত বাবার সাথেই থাকে। যাদের বাবা মা চাকরি করে তাদের ক্ষেত্রে সন্তান মায়ের কাছে থাকে। তার বেলায় উলটো কেন বুঝে পায় না প্রান্ত। তবে বাবার সাথে থাকতে খারাপ লাগে না একটুকুও। বাবা মানুষটা বেশ মজার। যেকোন কিছু বুঝিয়ে বলতে পছন্দ করেন। মা ঠিক তার বিপরীত। মায়ের ডিকশনারিতে বোধহয় বুঝিয়ে বলা বিষয়টি একেবারেই নেই, সরাসরি অ্যাকশনে চলে যান। অন্যমনস্ক থাকার ফলে ধাক্কা খাওয়ার সঙ্গেই মুখ থুবড়ে পড়ে যায় প্রান্ত। মনে জমে থাকা রাগটা যেন উপচে পড়ে। চেঁচিয়ে বলে উঠে, কোন বেয়াদবরে খবর আছে তোর মেরে ভর্তা বানিয়ে দিব। বাপের রাস্তা, দেখে শুনে চলতে পারিস না। কথা বলতে বলতে উঠে পড়ে প্রান্ত, দাঁতে লেগে ঠোঁট হালকা কেটে গেছে। রক্ত! রাগটা আরো বেড়ে যায়। মুঠি পাকিয়ে সামনে ঘুরতে দেখে এক দশ বছরের ছেলে সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে ছেলেটি ওর কথায় খুব ভয় পেয়েছে। পিচ্চি একটা ছেলেকে দেখে প্রান্তের রাগ কমে যায়। ছেলেটির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, কী নাম তোর? হাছান। বেশ ভালো, তা আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলি ক্যান ভাই? ছেলেটি কাঁচুমাচু করে বলে, ভাই আপনি তো মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন। আমি অনেকক্ষণ ধরে হর্ণ দিচ্ছিলাম কিন্তু আপনি একটু নড়ছিলেন না। পাশ কাটিয়ে আমি হয়তো চলে যেতে পাড়তাম। আমি এত করে হর্ণ দেবার পরেও আপনি সরছিলেন না তাই ভাবলাম আপনাকে বলা উচিত হয়তো খেয়াল করেননি মাঝ রাস্তায় আপনি দাঁড়িয়ে আছেন। কাছে এসে ডাকলাম তবুও কোন সাড়াশব্দ নেই।
চলবে… (পড়তে সাথে থাকুন সাবস্ক্রাইব করে রাখুন।)