ডায়েট মানেই কি অল্প খাওয়া? শরীর এবং মানসিক সুস্থতায় ডায়েট ও অল্প খাওয়ার প্রভাব কি!!

Effective ways to lose weight naturally
Spread the love

                          ডায়েট বনাম  অল্প খাওয়া

ভূমিকা:  সাধারণত ডায়েট বলতে আমরা বুঝি কম/ অল্প খাওয়াকে, ডায়েট শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য বিজ্ঞানসম্মত খাদ্যগ্রহণের একটি পদ্ধতি।

 অপরদিকে কম খাওয়া হলো খাদ্য গ্রহণের একটি ভুল পদ্ধতি যা কিছু মানুষ মনে করে কম খেয়ে সুস্থ থাকবে, কিন্তু এতে শরীরের জন্য হিতে বিপরীত হয়ে থাকে। এতে শুধু শরীর গঠনে বিরূপ প্রভাবই ফেলেনা সাথে সাথে মানসিক রোগে পরিণত হয়।

ডায়েট বলতে কি বুঝায়: একশ্রেণীর মানুষ মনে করেন ডায়েট মানেই কিছু ভেষজ উদ্ভিদ রসও কাঁচা সবজি খাওয়া মসলা বিহীন মাছ মাংস সিদ্ধ করে খাওয়া। ইহা খেতে যতই বিষাদ হোক না কেন? নিজের পছন্দ ও মানসিক প্রশান্তি বিসর্জন দিয়ে অপ্রিয় খাবার গ্রহণের মাধ্যমে তারা মনে করেন যে স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য উপযুক্ত খাবার খাচ্ছেন। যা তারা ডায়েট বলে বিশ্বাস করেন। মূলত সুসম পুষ্টি বজায় রেখে সঠিক পরিমাণে শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে বিজ্ঞান সম্মতভাবে খাদ্য গ্রহণকেই ডায়েট বলে।

 অল্প খাওয়া বলতে কী বোঝায়: কিছু কিছু মানুষ মনে করেন ওজন ও বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কম খাওয়ার কোন বিকল্প নাই। তারা বিশ্বাস করেন যত বেশি সময় বিভিন্ন খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে পারবে ততেই শরীরের জন্য মঙ্গল। এরূপ মনগড়া সিদ্ধান্তের কারণে শরীরের প্রচন্ড রকমের ক্ষতি করে থাকেন। সুতরাং কম খাওয়া বলতে বুঝায় শারীরিক চাহিদার কথা মাথায় না রেখে অযৌক্তিকভাবে অল্প পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করাকে।

ডায়েট ও অল্প খাওয়ার বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হলো:

 () পুষ্টিযুক্ত খাবার: যদি কোন ব্যক্তি তার শরীরকে সুস্থ রাখার উদ্দেশ্যে শরীরে কী পরিমাণ পুষ্টি প্রয়োজন তা পূরণ করে থাকে খাদ্য হিসেব করে খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে এবং তার শরীরে কত ক্যালোরি পুষ্টির প্রয়োজন তা খাবারের মাধ্যমে পূরণ করে তবে তাকে অপুষ্টিজনিত রোগে ভুগতে হবে না। বরং এতে করে তার শরীর সুস্থ থাকবে এবং অতিরিক্ত ওজনের যন্ত্রণার সহ বিভিন্ন রূপ বাঁচতে পারবে। একজন ব্যক্তির যখন ডায়েট সম্পর্কে জ্ঞান থাকবে কেবল তখনই সঠিক পরিমাণ পুষ্টি খাবারের মাধ্যমে গ্রহণ করতে পারবে। অন্যদিকে যাদের ডায়েট সম্পর্কে ধারনা না থাকবে তারা পুষ্টি পরিমাণ ও উৎস না বুঝে শুধ কম খেতে থাকবে আর এই প্রান্ত ধারণা পোষণ করে সে পুষ্টির খাবার খেলেই ওজন বেড়ে যাবে এবং অসুস্থ হবে মূলত তারাই কম খাওয়ার কারণে পুষ্টিহীনতায় ভোগবে।

() বিশেষ কিছু রোগের ক্ষেত্রে ডায়েট ও অল্প খাওয়ার প্রভাব: কম খাওয়া কিছু ক্ষেত্রে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়, যেমন- ডায়াবেটিকস, আমাশয়, থাইরয়েড ইত্যাদি রোগীদের ক্ষেত্রে ডায়েট খুবই জরুরী। এই ধরনের রোগীদের ক্ষেত্রে নিজেদের ইচ্ছামত বা পছন্দ মতো খাবার গ্রহণ করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়। খাবারের ধরণ, পরিমাণ ও সময় হিসাব করে খেতে হবে। এখানে ডায়েট মেনে খাওয়া শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজন। যেমনি খাবারের পরিমাণ বেশি কম হতে পারবে না তেমনি খাবারের ধরণ সময় জ্ঞান মানতে হবে। চিকিৎসা বিজ্ঞান এদের জন্য খাদ্য তালিকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এই ডায়েট এর তালিকা মেনে চললে এই ধরনের রোগে যারা আক্রান্ত তারা বেশি দিন বেঁচে থাকতে পারবে।

 অন্যদিকে নিজের ইচ্ছামত কম খেলে এই ধরনের রোগীরা হঠাৎ বিপদের সম্মুখীন হতে পারেন। কম বা অল্প খাওয়ার কারণে শরীরের মারাত্মক ক্ষতি ডেকে আনেন যারা নিজে নিজে কম খাওয়াকে   কুঅভ্যাস বা রোগে পরিণত করে ফেলেছেন।

() ওজন, উচ্চতা ও বয়স বিবেচনায় খাদ্য গ্রহণ: যদি কোন ব্যক্তির ওজন বেশি হয় তবে তার শরীরে খাদ্যের চাহিদা বেশি হবে। প্রতিটা শরীর গঠিত হয় অসংখ্য কোষের সমন্বয়ে। প্রতিটা কোষের ভিন্ন ভিন্ন ভাবে খাদ্য চাহিদা রয়েছে। যার শরীরে যত ওজন বেশি বা আয়তন বড় তার শরীরের খাদ্য চাহিদাও ততবেশি।

 এখানে বয়সের বিষয়ও অস্বীকার করা যাবে না। ওজন, উচ্চতা, শরীরের আয়তন এবং বয়স বিবেচনায় একজন ব্যক্তির খাদ্যের সঠিক পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে। এটা ডায়েট এর মাধ্যমেই নির্ধারণ করা সম্ভব। যদি এর হেরফের হয় তবে শরীর সুস্থ থাকা সম্ভব নয়। ডায়েটিংএ শরীর সুস্থতার উত্তম পন্থা।

 অপরদিকে নিজের ইচ্ছামত অতিরিক্ত  অল্প খাওয়ার অভ্যেস করলে কোনো মতেই শরীরের কোষের পরিমাণ, ওজন ও বয়স অনুযায়ী সঠিক খাদ্য গ্রহণ সম্ভব নয়, যা খেয়ে একজন মানুষ সুস্থ থাকতে পারে। কম খাওয়ার ক্ষতিকর দিক অনেক বেশি।

() শরীর এবং মানসিক সুস্থতায় ডায়েট ও অল্প খাওয়ার প্রভাব: কিছু কিছু টখাবার আছে যা শরীরের সুস্থতা এবং মানসিক প্রফুল্লতার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রতিনিয়ত না হলেও মাঝেমধ্যে ওই খাবারগুলো আমাদের গ্রহণ করা জরুরি। যেমন- উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায় মধু ও দুধ মিষ্টি তৈরি ইত্যাদি। এগুলো পরিমাণমতো খেলে শরীরের যেমন উপকার তেমনি বেশি পরিমাণ খেলে অসুস্থ হবার সম্ভাবনা রয়েছে। আবার খাদ্য তালিকা থেকে সম্পূর্ণ বাদ দিলে অপুষ্টি, মানসিক  বিকাশ  রোধ সহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। উক্ত খাবারের মধ্যে মিষ্টি জাতীয় খাবার গ্রহণের পূর্বে বিবেচনা করতে হবে যে ডাইবেটিসের পরিমাণ কেমন আছে যদি বেশি থাকে হিতে বিপরীত হবে। যদি ডায়রিয়া চলা অবস্থায় দুধ খাওয়া হয় তাহলে তা বেড়ে গিয়ে আরো বিপদ হবে । উৎকৃষ্ট খাবার হলেও তা খাওয়ার বিষয় সঠিক পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে এবং শরীরে উক্ত খাবার উপযুক্ত কিনা তা বিবেচনা করে খেতে হবে। অর্থাৎ ডায়েট মেনে খেতে হবে তাহলে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকা সম্ভব।

 অপরদিকে, শরীরের অবস্থা বিবেচনা না করে খাবার থেকে বিরত থাকে তাহলে প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান শরীরের ঘাটতি হয়ে শারীরিক ও মানসিক অবস্থার অবনতি হবে। সমসাময়িক কালে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ডায়েটের নামে মানুষ অল্প খাওয়ার অভ্যেস করতে করতে এমনও দেখা যায় যে অনেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী ও মানসিক রোগীতে পরিণত হচ্ছে যা খুবই দুঃখজনক।

 কম খেলে কি কি ক্ষতি হয় তা নিম্নে তা আলোচনা করা হলো:

()  দুর্বল ও শক্তিহীন হয়ে পড়ে: প্রায় সকল খাবারই শরীরের জন্য উপকার হয়ে থাকে তবে পরিমাণমতো খেতে হবে। পরিমাণমতো খেতে বলতে অতিরিক্ত কম খাওয়া নয়। অতিরিক্ত কম খেলেও শরীরের ক্ষতি হতে পারে। যদি খাবার কমাতে গিয়ে খাদ্য তালিকা থেকে সম্পূর্ণভাবে ভাত, আলু, রুটি ইত্যাদি বাদ দেই তবে মানব শরীরে কার্বোহাইড্রেট বাদ দেই। কার্বোহাইড্রেট হলো শরীরের শরীরের জ্বালানি বা ফুয়েল। কার্বোহাইড্রেট শরীরে একেবারে না থাকলেই আমরা দুর্বল হয়ে পড়বো। এইজন্য পরিমাণমতো ভাত, আলু, রুটি  ইত্যাদি খাদ্যতালিকায় রাখলে দুর্বল হওয়া হতে রক্ষা পাবো।

()হার্টের ক্ষতি হয়: অল্প খেতে গিয়ে শরীরের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ঘারতি বা ফাইবার এর ঘারতি হয়ে থাকে। এতে আমাদের হার্ট  ভালো থাকবে না। এজন্য অল্প খাওয়ার নামে ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত খাবার বাদ জানো না দেই। গারো শাকসবজি খেলে রক্ত সঞ্চালনের বৃদ্ধির মাধ্যমে হার্ট  সুস্থ থাকবে।

হলুদ ফল ও হলুদ রঙ্গের সবজিতে আছে ক্যালটিস অয়েল যা ফ্যাট কমায়। যেমন- কমলা, কুমরা, টমেটো, গাজর ইত্যাদি। অল্প নয় এগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে না খেলে আমাদের হার্ট ভালো রাখা সম্ভব নয়।

() কিডনির বিভিন্ন সমস্যা হয়: পটাশিয়াম, ফসফরাস ও মেগা এই তিনটি উপাদান গুলোর ঘারতি যদি শরীরে দেখা দেয় তবে কিডনির সমস্যা হয়। অল্প খাওয়ার নামে যদি আমরা উক্ত উপাদান যুক্ত খাদ্য ঘারতি করে ফেলি তবে কিডনিতে বিভিন্ন রোগ দেখা দিতে পারে। তাই আপেল, রসুন-পিয়াজ, মাছ-মাংস, ডিম ইত্যাদি খাবার পরিমাণমতো  গ্রহণ করে আমাদের কিডনি ভালো রাখবে।

() ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে: পরিমাণমতো মাছ-মাংস ডিম ও টক ফল না খেলে আমাদের শরীরে ক্যান্সার বাসা বাঁধতে পারে।

() ত্বকের রোগ হতে পারে: পরিমাণমতো মধু, লেবু, ব্রকলি, লাল আটা ইত্যাদি খাবার না খেলে আমাদের শরীরের ত্বকের রোগ বৃদ্ধি পায়। এই খাবারগুলো শরীর হতে বিষাক্ত টক্সিন বের করে দিয় ত্বককে সুরক্ষা করে।

() চোখের রোগ হতে পারে: ছোট মাছ, লেবু, সবুজ শাকসবজি, ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়া, ঝিনুক ইত্যাদি খাবারে ভিটামিন ই, ভিটামিন সি ইত্যাদি থাকে। এগুলো যদি পরিমাণমতো না খাই তবে আমাদের চোখের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।

() হাড়ের রোগ হতে পারে: দুধ, সামুদ্রিক মাছ, পালং শাক, বাদাম ইত্যাদিতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও ক্যালসিয়াম। এই খাবারগুলোর যদি পরিমাণমতো না খেয়ে অল্প পরিমাণ খাই তবে ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামের অভাবে আমাদের হারুন রোগ হতে পারে।

() হাইপোগ্ৰাইসোমিয়া হতে পারে: আমাদের যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তারা যদি নিজে নিজে কম খাওয়ার অভ্যেস করে অতিরিক্ত অল্প খায় তবে  তাদের হাইপোগ্ৰাইসোমিয়া দেখা দিবে যা খুবই বিপদজনক।

 সবশেষে, আমরা অনেকেই ডায়েট মানেই  অল্প খাওয়াকে কি বুঝে থাকি। আর বিষয়ে সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে না বুঝেই আমরা অল্প খেয়ে থাকি। যার কারণে শরীরের দিনদিন মারাত্মক ক্ষতি হতে থাকে। আমরা ভাবতে থাকি যে, অল্প খেয়ে সুস্থ থাকব। কিন্তু এতে ফলাফল হয় উল্টো। বিভিন্ন খাবার ঘাটতির কারণে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি। তাই আমাদের উচিত সঠিক ভাবে এবং সঠিক পরিমাণে খাবার গ্রহণ করা। এ বিষয়ে যেন জনসাধারণের মাঝে যথেষ্ট সচেতনতা বৃদ্ধি পায় সেই লক্ষে সামাজিক, রাষ্ট্রীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করা প্রয়োজন। ডায়েট এবং অল্প খাওয়ার মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে জ্ঞান থাকা এখন অতি জরুরী বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Writer: Afsana

Edited By: Al-Resalat


Spread the love

Aspire Cot

I am just a grave of thoughts. I know only one thing that I know nothing. people with nothing to declare carry the most but be sure I am exceptional.

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *