প্রিয় মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করবেন যেভাবে।
প্রিয় মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করবেন যেভাবে।
নারী পুরুষের একে অপরের প্রতি আকর্ষণ যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। সেই আদী যুগ ধরে নারী নিজেকে রেখেছে রহস্যময়ী করে আর পুরুষ নিজেকে আকর্ষণীয় ভাবে নিজেকে নারীর সামনে মেলে ধরার চেষ্টা করে আসছে। নারী নিজেকে গোলক ধাঁধার মাঝে পেঁচিয়ে রাখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, আর পুরুষ তাঁর পুরুষত্ব, শৌর্য-বীর্য ও ক্ষমতা দেখাতে ভালোবাসে। সে নারীর সামনে নিজেকে মেলে ধরতেই ভালবাসে। প্রিয় মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করতে নারী পুরুষের চেস্টার অন্ত নাই সেই আদি কাল থেকে।
প্রিয় মানুষকে আকর্ষণ করার সবচেয়ে ভালো উপায় তার মনোজগত সম্পর্কে ধারনা থাকা। তার পছন্দ অপছন্দের ব্যাপারগুলো জানা। তার চাওয়া পাওয়াগুলো জানা ও তার যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া।
আপনার প্রতি কি তার মনোযোগ আগের থেকে কমে আসছে? অথবা, সে কি আপনাকে আগের মত গুরুত্ব দেয় না? প্রশ্ন দুটির উত্তর হ্যাঁ হলে এই লেখা আপনার জন্য।
বয়ফ্রেন্ড বা গার্লফ্রেড যাই বলুন না কেন, তাদের কাছ থেকে বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করা অনেকটা কষ্টের। তবু কিছু টেকনিক অবলম্বন করলে তাদের মনোযোগ আগের থেকে অনেকটা নিজের দিকে নিয়ে আসা যায়।
তাকে এড়িয়ে চলুনঃ
আপনি যখন কাউকে ইগনোর করবেন তখন দেখবেন সে আপনার উপর বেশি এটেনশন দিচ্ছে। বলা হয়ে থাকে- “Ignorance is a blessing in every relationship.” শুধু আপনি বা আমি নই, পৃথিবীর কেউই ইগনোরেন্স/এড়িয়েচলা মানতে পারেনা। আপনি যখন আপনার ভালবাসার মানুষকে এড়িয়ে যাবেন তখন দেখবেন সে আপনার কাছা কাছি চলে আসার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। মনে করুন, আপনি কাউকে প্রতিনিয়ত প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু সে আপনার ডাকে সাড়া দিচ্ছে না। আপনি তাকে এখন একটু এড়িয়ে চলে দেখুন। দেখবেন আপনার জন্য সে অপেক্ষা করছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে ইগনোর করলে প্রেম হয়। আপনার ভালবাসার মানুষকে আকর্ষণ করার জন্য ইগনোর করতে থাকুন দেখবেন সফল হবেন। খেয়াল রাখবেন ইগনোরের লেভেল যেন বেশি হয়ে না যায়।
তার সামনে হাসিখুশি থাকুনঃ
তার উপস্থিতিতে হাসিখুশি থাকুন। তার সামনে অতিরিক্ত উৎফুল্ল থাকার চেষ্টা করুন দেখবেন সে আপনাকে আকর্ষণ করার জন্য বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করছেন। তার সামনে আশেপাশের বিভিন্ন সৌন্দর্য নিয়ে কথা বলুন যেন তার দিকের থেকে আপনার মনযোগ অন্যদিকে বেশি। মোটকথা তার সামনে ঠুনকো জিনিস উৎফুল্ল থাকার অভিনয় করুন। এতে সে মনে করবে আপনি তাকে আর আগের মত কেয়ার করছেন না। এসব তার খেয়ালে আসলেই দেখবেন সে আপনাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরেছে।
Martial বলেছেন- “A face that cannot smile is never good.”
অপর দিকে আপনাকে হাসিখুশি দেখলে তার মন ভালো থাকবে। আপনার সুখের মুহুর্তের সাথে হতে চাইবে সে। আপনাকে হাসি খুশি রাখতে চাস্তা করবে।
মন খারাপের অভিনয় করুনঃ
যখন দেখবেন আপনার থেকে তার খেয়াল সরে যাচ্ছে। একটু মন খারাপ করুন। দেখবেন সে আপনাকে প্রফুল্ল রাখতে কতইনা চেষ্টা করে যাচ্ছে। তার মন খারাপ দেখলে অতিরিক্ত প্রশ্ন না করে তার মন ভালো করতে চেষ্টা করুন। ফ্যান করুন তার সাথে। রেস্টুরেন্টে যেতে পারেন তাকে নিয়ে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে মন খারাপের সময় মুখোমুখি বসে খাওয়া দাওয়া করলে মন ভালো হয়। নিজের ভাগ থেকে ভালো একটা অংশ তাকে খাইয়ে দিন বা তার প্লেটে দিন, এতে সৌহার্দ্য বাড়ে।
অন্যদের ফ্লার্ট বা প্রশংসা করুনঃ
প্রেমিক প্রেমিকা চাইবেনা তাদের সামনে অন্যের প্রশংসা শুনতে। প্রিয় মানুষটির পাশে বসে কারও প্রশংসা বা ফ্লার্ট করলে সে হার্ট হবে। কোন প্রেমিক/প্রেমিকা চায় না তার সামনে তার প্রিয় মানুষটা অন্যের প্রশংসা করুক। এতে তার মনে হিংসা জন্মাবে। আর সে আপনার প্রতি আকৃষ্ট হবে। আপনার খেয়ার তার দিকে টানতে চেষ্টা করবে। সে যখন দেখবে অন্য মানুষ আপনার কাছে তার থেকে গুরুত্বপূর্ণ তখন সে আপনার দিকে ধাবিত হবে। অনেক সময়ে হিতে বিপরীত হতে পারে তাই সময় বুঝে ফ্লার্ট করবেন।
তাকে সময় দিনঃ
ভালোবাসার মানুষ থেকে খুব বেশি দূরে থাকা ঠিক নয়। দূরত্ব প্রেমে ফাটল ধরায়। বিখ্যাত সাহিত্যিক Mirabeau বলেছেন-
“Short absence quickens Love; Long absence kills it.”
সময়ের অভাবে প্রেম ধূসর হয়ে আসে বাজে ভাঙনের সুর। আপনি তাকে সময় না দিলে সে আপনার থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে যাবে। আপনাকে ভুলতে শুরু করবে। ঘুম থেকে জাগা থেকে শুরু করে রাত্রে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত তার জন্য কিছু সময় রাখুন। প্রতিদিন দেখা করবেন না। প্রতিদিন সরাসরি দেখা করলে প্রেম ঢিলাঢালা হয়ে যায়। একজনার আরেকজনার প্রতি গুরুত্ব কমে যায়। মাঝে মাঝে দেখা করুন। এটা ইন্টারনেটের যুগ। ফেচবুক, মেসেঞ্জার বা মোবাইলে তার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন। আর সময় করে তার সাথে মাঝে মাঝে ঘুড়তে বের হবেন। এতে আপনার এবং তার মন ভালো থাকবে। যা প্রেমকে দীর্ঘায়ু করবে। একান্ত সময় কাটাতে দর্শনীয় স্থানে যান। কারনে অকারণে রুম ডেট এড়িয়ে চলুন।
তার প্রশংসা করুনঃ
কে নিজের প্রশংসা শুনতে চায় না। নিজের প্রশংসা শুনতে চায় না এমন লোক খুব কমই পাবেন। প্রিয় মানুষের প্রশংসা করুন। তাকে বুঝান যে তার চিন্তা চেতনা উচ্চ লেভেলের। তার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের তারিফ করুন। তার কাজের সুনাম করুন। দেখবেন সে ধীরে ধীরে আপনার দিকেই ধাবিত হচ্ছে। আপনি ছাড়া সে একসময় আর কিছুই বুঝবে না। তার বন্ধু বান্ধব নিয়ে নেগিটিভ বলতে যাবেন না বেশি। ফ্রেন্ড সার্কেল নিয়ে অতিরিক্ত সমালোচনা করতে গেলে সে মনে করবে আপনি তার উপর জোর খাটাচ্ছেন। সবার থেকে তাঁকে সরিয়ে নিচ্ছেন।
তাকে বাধা দিনঃ
তার ভেতর কোন কিছু আপত্তিকর দেখলে তাকে বাধা দিন। তার বন্ধু বান্ধব খারাপ হলে তাকে বুঝানোর মাধ্যমে সরে আসতে বলিন। সবার বিবেক আছে, কারো বিবেক সুপ্ত থাকে। তার ভেতর ঘুমিয়ে থাকা বিবেককে জাগিয়ে দিন। ভালো মন্দ বুঝান। মন্দ কাজে বাধা হয়ে দাড়ান আর কথার মাধ্যমে তাকে বুঝান যে আপনি তাকে বাধা দিচ্ছেন না তবে কাজ করার আগে কিছু দিক ভেবে দেখতে বলছেন। এতে সে ভালো মন্দ নিজেই বুঝতে পারবে এবং তার প্রতি আপনার ভালবাসাকে অনুভব করবে। প্রতিদিন আপনাকে নতুন রূপে আবিষ্কার করবে। প্রিয় মানুষের মনোযোগ আকর্ষনে তাকে বাধা দিলে দেখা যায় আপনার বাধা পেয়ে তা পজিটিভলি নিবে এবং আপনার প্রতি তার ভালোবাসা বেড়ে যাবে।
তার সামনে মার্জিত থাকুনঃ
ভালবাসার মানুষকে সবাই দেবী বা দেবতা রূপে পেতে চায়। তার সামনে মার্জিত হোন। সবসময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকার চেষ্টা করুন। পরিপাটি থাকুন। যেই পোষাকই পড়ুন না কেন তা যেন সুন্দর এবং আপনার সাথে মানানসই হয়। আচার আচরন প্রিয় মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করতে এক বিশেষ ভুমিকা রাখে।
এডাল্ট দিক এড়িয়ে চলুনঃ
ভালবাসলে প্রেমের এক পর্যায়ে যৌনতা আসবে। একে অপরকে পাওয়ার আকাঙ্খা জাগতে পারে। তাড়াহুড়া করবেন না। তার সামনে নিজেকে কখনোই কামুক রূপে উপস্থাপন করবেন না। যৌন আবেদনময়ী আচরন করবেন না। যা হওয়ার এমনি এমনি হয়ে যাবে শুধু অপেক্ষা করুন।
আত্মবিশ্বাসী হনঃ
নারীরা আত্মবিশ্বাসী ছেলেদের পছন্দ করে। নিজের আত্মবিশ্বাস প্রমানের জন্য সব সময় চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলুন। সবসময় তার ভালো দিকগুলো তুলে ধরুন। যেমন তোমাকে হাসিখুশি মনে হয়। তোমার সব কাজই ভাল হয়। তুমি অনেক পজিটিভ ইত্যাদি ইত্যাদি। তার কোন একটা দিক ভালো না লাগলে ভদ্রভাবে তাকে বুঝান।
মতামতের গুরুত্ব দিনঃ
সে কথা বলার সময় তাকে সময় দিন। সব ব্যাপারে তার মতামত জানতে চাইবেন। তার কোন সিদ্ধান্ত ভালো না লাগলে সরাসরি ভালো না লাগার কথা না বলে আগে তাকে ব্যাপারটা বুঝান। ভালো লাগেনি না বলে বলুন কাজ টা অইভাবে না করে এইভাবে করলে কেমন হবে? দেখবেন সে আপনাকে বুঝতে পারবে। তার সকল কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। সর্বোপরি আপনাকে একজন ভালো শ্রোতা হতে হবে। আপনি যত ভালো শ্রোতা হতে পারবেন আপনি তত ভালো প্রেমিক/প্রেমিকা হবেন।
তাকে গুরুত্ব দিনঃ
তার ভালো-মন্দ লাগা, প্রিয়-অপ্রিয়, পছন্দ-অপছন্দ সব কিছু জেনে নিন। আপনার সাথে তার অনেক কিছুই মিলবেনা। যা কিছু আপনার সাথে মিলবেনা তা আলোচনায় কম নিয়ে আসবেন। আপনার পছন্দের সাথে মিলে যায় এমন যা কিছু আছে তা বারবার আপনাদের আলোচনায় টেনে আনুন। মাঝে মাঝে তার পছন্দের কিছু করে তাকে সারপ্রাইজ দিতে পারেন। এতে খুব ভালো ফল পাবেন। আপনার কাছে তার গুরুত্ব যে অনেক বেশি তা বোঝান, তাকে ছাড়া আপনি ভালো থাকেন না তা তাকে বুঝান কথা আর কাজের মাধ্যমে। যতক্ষণ আপনারা একত্রে থাকবেন তাকে বোঝাতে চেষ্টা করুন আপনি তার প্রতি কতটা বেশি মনোযোগী। তার প্রতি যে আপনার পূর্ণ আকর্ষণ রয়েছে তা তাকে কথা দিয়ে বুঝাতে হবে।
তাকে মাঝে মাঝে উপহার দিনঃ
ভালবাসতে জানলে বছরের ৩৬৫ দিনই ভালোবাসা দিবস, আর ভালবাসাকে গভীর করতে সুন্দর সুন্দর গিফট এর বিকল্প নাই। তাই যেকোনো দিন চাইলে তাকে উপহার দিতে পারেন। উপহার কে না চায়। খেয়াল রাখতে হবে উপহার যেন তার পছন্দের তালিকার মধ্যে থেকে হয়। উপহার মানেই আকর্ষণ। উপহার মানেই ভালোবাসা। তাই ভালবাসার মানুষটিকে উপহার দিন আর তার মনে স্থান করে নিন।
জানেন তো, আপনার মন, আপনার ভালবাসা আপনিই ভালো বুঝেন। চারপাশে দেখে আর নিজের কিছু ভালো এবং তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে আমি এসব লিখলাম। আশা করি nপ্রিয় মানুষের মনোযোগ আকর্ষণকরবেন এভাবেই, এসব মেনে চললে আপনার প্রিয় মানুষটি ধীরে ধীরে আপনার দিকে আরও বেশি আকৃষ্ট হবে। অর্থাৎ প্রিয় মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ হবে আপনার দিকে। আর যদি তাই ই হয় তবে আজকের এই লেখা সফল। ভালো থাকবেন সবাই। ধন্যবাদ।