নভেলঃ Today they are having sex.

Today they are having sex.
বাসর ঘরে বউ কিভাবে বসে থাকে?
শাড়ি-গয়না পরে একহাত ঘোমটা দিয়ে কি সুন্দর করে বসে থাকে। টিভিতে যেমনটা দেখায়। তাইনা?
জ্বিনা। মোটেও তা নয়।
নুরির কিন্তু আজকে বাসর রাত। দুর এটা একটা শব্দ হলো। বাসরর রাত শুনলেই সবাই মনে করে কি? টুডেয় দ্য আর হেভিং সেক্স!! ছি ছি কি লজ্জা।!! নুরি শ্বশুর বাড়ি গেছে রাত ৮ টায়। এসে সেই যে ভাইদের বিয়েতে দেখেছিলো, ভিডিও করছে, দরজা বন্ধ করে দিয়ে যেনো ছোটোরা ঢুকতে না পারে। অথচ ভিডিও হচ্ছে!! আচ্ছা ছোটোরা যদি ঢুকতে না ই পারে তাহলে ভিডিও করে কাকে দেখাবে? আজিব না?!! নুরির কৌতুহল হতো কি ভিডিও করতো? কেমনে করতো?? আজকে অভিজ্ঞতা হলো। এই করে? ছে ছে।।।
একবার মালা বদলাই দেও। একবার বলে পায়ে সালাম করো। একবার বলে শরবত খাও এক চুমুক কইরা এক গ্লাসে। ওমা!! খাটের ওপর বইসা বলে গলা জড়াই ধরে বসে থাকতে হবে।
এটা কোনো কথা?! এই ভিডিও কি আপলোড করা হবে? লজ্জায়য় বাঁচা যাবে আর? সবাই কি বলবে? ইয়া আল্লাহ!! নুরি নাকি এ্যারেন্জ এ বিয়া করছে। ওহ হো টপ ক্লাস সুন্দরি এখন হেভিং সেক্স এর ভিডিও আপলোড দেয়। লিংক হপে লিংক?!
যতসব ফালতু কাজ।
কয়টা বাজে এখন?
রাত ১১ টা। এ রাত বাসর রাত? এই রাতের জন্য গান গায় মাইনষ্যো — আজ একটি রাত জাগব বলে হায় কত রাত করেছি প্রতিক্ষা!!!
মাই ফুট।!!
আর স্বামী নামক অপদার্থ টা নাই। কই যে পলাইছে: নাই, কোনো খবরই নাই।
নুরি একখানা সাদামাটা শাড়ি পড়ে। গয়নাগাটি খুলে মেকাপ তুলে সোফার ওপর দুই ঠ্যাং তুলে বসে বসে ঝিমুচ্ছে। বিয়েবাড়ির সবাই টায়ার্ড। স্বামী ছেলেটা নাই। তাই নুরির ঘুমানো যাবেনা।
সি ইজ ওয়েটিং ফর হার স্বামী।
নুরি বসো বসেই ওয়েটিং করতে করতে দারুন সুরে নাক ডাকতে শুরু করে ঘরররর..ফুসসসসস….ঘরররর…ফসসসস….
-হ্যালো, হ্যালো।
এই, কে ফোনে কথা কয়?
নুরি চারপাশে তাকায়। ওমা!! দরজার কোণে কেডা খাড়াই আছে?! আল্লাহ গো। ভয় পাইছি।
-সরি ফর ডিস্টার্বিং। আপনি ঘুমান।
-আপনি কই ছিলেন এতক্ষন?
-জ্বি মানে ওই তো…
-আড্ডা মারতেছিলেন? কেন আপনার সাথে আমার এসব বিষয় নিয়া কথা হয়নাই?
-হয়েছে তো।
-তাহলে?
-আমি তো আড্ডা মারতে যাইনাই। আমি একটু ফ্রেস হইতাম।
-এই, চুপচাপ বসেন এইখানে। রাত বাজে ১২:৩০.আইজকা আমাদের বাসর রাত ভুলে গেছেন?
-না ভুলিনাই।
-বিছানায় চলেন।
-এ্যাঁ?!
-আরে আজিব!! বিছানায় চলেন। এখানে বসে কি করবেন?
-আমি একটু আসি?
অনিক বাথরুম দেখায়।
-ছোটো না বড়?
-দুইটাই।
-ওহ হো!!! তাড়াতাড়ি আসবেন।
অনিক কেমন টলতে টলতে বাথরুমে যায়। এই ডেন্জারাস মেয়ে আজ তার ইজ্জত কি শেষ পর্যন্ত রাখবে? যে কারণে দেরিতে রুমে আসা সেটাই যদি ঘটে যায় তবে কি হবে??
অনিক দোয়া পড়ে… আল্লাহ বাঁচাও আমারে
কিছু পরেই…
-কি ব্যাপার এতো লেট হচ্ছে কেনো?
কি করেন ভেতরে?
-হাগু করি।
-ইয়াকক… ছিহ এটা আবার বলতে হয়? জঘন্য…
-আপনিই তো দরজা তখন থেক ঠকঠক করেই যাচ্ছেন। আর জিজ্ঞেস করেই যাচ্ছেন কি করেন কি করেন।
-চুপ। কাজ সারেন।
আমি স্বামী না আসামী? অনিকের চোখ কি ছল ছল করছে? ফিউচারের কথা ভেবে। আহারে বেচারা। বিয়েই করতে চায়নি। বাপ মা ধরে বান্ধে বিয়ে দিলে। অনিক মাত্রাতিরিক্ত ভালো একটা ছেলে। হাবাগোবা নয় কিন্তু খুব ই ভদ্র।এটাকে অনেকেই শয়তানি মনে করত। ওর বাবা ও তাই মনে করলো। আজকাল তো বোঝা যায়না কে ভালো আর কে মন্দ। তাই ভাবলেন বিয়ে দিলে ঠিক হবে।
অনিক পালিয়েছিলো।
ওকে আবার পুলিশ দিয়ে ধরে আনানো হয়েছে। আচ্ছা এই সন্ত্রাসী কি জানে আমি পালিয়েছিলাম? জানলে আজ নির্ঘাত মেরে ফেলবে।
-আর কতক্ষন?
অনিক বের হয়ে আসে। চুপচাপ এসে মেঝেতে বসে পরে।
-কি ব্যাপার মেঝেতে বসলেন কেনো?
-এমনিই…
-আপনি আগে উপরে উঠবেন না আমি আগে উঠব??
-এ্যাঁ কি?!
-আরে বাপ আপনি উঠেন আগে উপরে উঠেন। স্বামীদের আগে উঠতে হয়।
অনিক চিঁ চিঁ করে বলে,, কোথায় উঠব?
নুরি একটা ধমক দিয়ে বলে, আমার মাথার উপ্রে।
-ওহ… আচ্ছা আমি তো ভাবলাম।
-কি ভাবছেন?
আরেব্বাস মিনমিনে শয়তান। কিন্তু দেখো ওইসব আবার ঠিক ই বোঝে। ভংচং ছাড়েন। আমার সাথে ওইসব চলবেনা। শুনেন আপনাকে বিয়ে করছি আপাতত।
-আপাতত মানে?
-আমার বিএফ কিছু করেনা ভালো জব পাইলে আমি চলে যাব।
-এটা কেমন কথা। তাহলে বিয়ে করলেন কেনো?
-ও বাবা!! আপনি নাকি পালিয়েছিলেন।!! তাহলে পালিয়েছিলেন কেনো?
-কে বলল আপনাকে?
-বলার মানুষের অভাব। যান বিছানায় যান। শুয়ে পড়ুন। কি হলো উঠুন।
অনিক মুখ গোমরা করে বিছানায় শুয়ে পড়ে। সন্ত্রাসীর বিএফ ও আছে? অনিকের কি চোখ ছলছল করে? বউ তার অন্যের হয়ে আছে অনেক আগে থেকে। এটা কি মানা যায়।
-এই যে শুনছেন
-বলেন।
-আমার পিঠটা চুলকে দেন তো।
-পারবনা
-পারবনা মানে? আমি কি এখন মানুষকে ডাকব?
জামাইকে পাশে রেখে অন্য মানুষকে দিয়ে গা চুলকে নেব?
-আমি মেয়েদের গায়ে হাত দেইনা। কখনো দেইনি দেবওনা।
-কি?!
-এটা ঠিকনা।
-আপনি কি পাগল না ছাগল নাকি আমিই গরু?
-সেটা আমি জানিনা। ওইসব কাজ আমাকে করতে বলবেননা।
নুরির মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে। এই ছেলেটা কি আসলেই এমন বোকাসোকা নাকি ঢং করছে সেটা বাজিয়ে দেখা যায়।
সে আস্তে আস্তে অনিকের কাছে যায়।
কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে…
-এই….
-ওরে আল্লাহ…
অনিক ধরাস করে উঠে বিছানায় লাফিয়ে। নুরি অনিকের হাত টা ধরে বলে,
-জান দেখোনা আমার বুকের ভেতরটা কেমন ঢিপঢিপ ঢিপ ঢিপ করছে….
অনিক চোখ বন্ধ করে বলতে থাকে…
-লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুন্তু মিনাজ জোয়ালিমিন…
ছেলেটা ঘেমে টেমে একাকার। নুরি হাসতে হাসতে পাগলপ্রায় হয়ে যায়। এরকম ছেলে সে জীবনেও দেখেনি। পলাশ আর অনিক মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। পলাশ সবসময় ওর রূপ আর ফিগারের প্রশলসায় মেতে থাকত। আর এই ছেলেটা বউ কে পর্যন্ত ছুঁতে চাচ্ছেনা।
হঠাৎ হাসি থামিয়ে নুরি গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করে,
-আপনি কি ইমপোটেন্ট?
অনিক মুখ হা করে তাকিয়ে থাকি নুরির দিকে। কি বলে এই সন্ত্রাসী?!
-পানি খাবেন?
-হ্যাঁ খাব।
নুরি দুষ্টুমি করে এক গ্লাস পানি হাতে নিয়ে মিছিমিছি বিরবির করে পানিতে ফুঁ দেয়।
-নিন খান।
-এই আপনি ফুঁ দিলেন কেনো?
-যাদু করলাম। আপনি যেনো আমার কথা শুনেন সবসময়।
-কি?! ছি ছি আপনি এমন!! খাবনা।
-আপনি খাবেন না আপনার আব্বা খাবে।
অনিকের কি চোখ ছলছল করে? আহারে বেচারা!! ভালোই ফেসে গেছে।
-আপু, আপনি এমন কেনো?
-আপু!! আপু!!!
নুরি রেগে একেবারে এটম বোম আপু আপনার আম্মা আপনার আব্বা আপনার শ্বাশুরি আপনার শ্বশুর। আপুর বাচ্চা। খান পানি খান।
অনিক ঢকঢক করে পানি খায় আর দোয়া পরে ফুঁ দেয় নুরির গায়ে।
-এই আপনি আমাকে ফুঁ দিচ্ছেন কেনো?
-আয়াতুল কুরছি পরে কাউকে অনবরত ফু্ দিতে থাকলে তার রাগ কমে যায়। নবীজী স: বলেছেন।
-সত্যি….
নুরির রাগটা ধুপ করে কমে গেলো। ছেলেটা কি সুন্দর করে দোয়া পড়ছে। আলহামদুলিল্লাহ।
-আপনার বয়স কি আমার চেয়ে কম?
-না। তবে মেন্টালি আমি আপনার চেয়ে ছোটো।
-কেমনে?
-আপনি অনেক কেমন জানি।
ওমা!! অনিক কেমন লাল হয়ে যাচ্ছে। নুরি হা হা করে হেসে ওঠে। এতো ছোটো ছেলেকে কেনো বিয়ে দিলো কে জানে। এর তো মনেহচ্ছে দুধদাঁত ই পড়েনাই। এয় বউ সামলাবে কি করে!!
-আজকে তো আমাদের হেভিং সেক্স নাইট…
-নাউজুবিল্লাহ।🤐
-আরে… এমন করেন কেনো? বাসর রাত বাসর রাত। এটারে ইংলিশে বললাম। এহহহ বাসর শুনলে পান্তা ভাত মনে হয় আর এটা শুনলে এলিয়েন মনে হয়?
-আপনি এভাবে আমার সাথে কথা বলবেননা।
-কিভাবে বলব? হেগো ওগো শুনছো গো… এভাবে? হা হা হা….
অনিকের কাছে মনে হয় একটা শাকচুন্নি তেঁতুল গাছের উপরে বসে হিঁ হিঁ হিঁ করে হাসছে। উল্টো পাশে ঘুরে সে শুয়ে পড়ে। নুরি চোখ কুঁচকে তাকিয়ে থাকে। আজিব!! শুয়ে পড়লো? আবার? এ কি রে বাবা! কিছুই বোঝেনা!! আজকের রাত কি ঘুমিয়ে কাটানোর রাত? কি এক গাধা জুটলো কপালে। ইহারে লইয়া আমি কি করিব হায়….
এই গাধারে ঠিক করতে হবে। পলাশকে দেখিয়ে দেখিয়ে বিয়ে করেছে নুরি। বিয়ের আগে বলেছিলো…
-দেখ ব্যটা, বিয়া করতাছি। কি ছি্ড়বি ছিঁড় এবার। বাসর করুম। বাচ্চাকাচ্চা পয়দা করুম। হেগো কমু আব্বাজানেরা দেখে ওই যে তোমাদের মামু। তোরে মামু কইয়া ডাকব কোলে নিবি তুই। তুই চকোলেট কিন্না দিবি।
শালা বইসা বইসা মুরি খা!!
বেশি কিছু না, পলাশ শুধু বলেছিলো তোমার আমার পিকস ছেড়ে দেব,
-কেমন পিকস?
-একসাথে বসে তুলেছিলাম। গলা জরাজরি করে ।হাত ধরে। গালে চুমা দিয়ে।
-আর কিছু করছিলাম?
-সময় পাইলামনা তো।
নুরি প্রথমে বুঝাইলো। পলাশ আমরা তো একে অপরকে ভালোবেসেছিলাম। আমার কাছে মনে হয় এসব ঠিকনা। তুমি এমনিতেও পিনাট লুল তবুও তোমাকে ভালোবাসছি। তুমি অন্য মেয়েদের সাথে এইভাবে ঢলে ঢলে কথা বলো ভালো লাগেনা। আমাকে একান্তে চাও এসব কি? এগুলো করলে আমি তোমার সাথে থাকবনা।
পলাশ গেলো চেতে..
-ফাক ইউ অ্যাসোল….
নুরি কম? পলাশের চেয়ে আরো দশ ডিগ্রি বেশি। এতো বুঝানোর পর যখন বুঝলনা তখন বলল,
-যা বাল।পিক্স দিয়া মুরি খা।ফাক ইউ।…বাস্টার্ড। যা কি করবি কর। তোর বাড়ির উপ্রে দিয়া যামু শ্বশুর বাড়ি। ছিড়িস পাড়লে। পিনাট লুল।
তারপরে এই হলো নুরি। বধূ বেশে অনিক নামের একটা সরল মনের ছেলের বউ হয়ে এসেছে। ইতোমধ্যে যে ছেলেটার জীবন তেজপাতা হয়েও গেছে। কি জানি সামনে আরো কি হতে বাকি আছে।
কিন্তু অনিকের আবার কি সমস্যা?! সত্যি যদি ছেলেটা ইমপোটেন্ট হয়? ওহ নো!! সব প্ল্যান চোপাট হয়ে যাবে।
অনিক নাক ডাকছে।
এই ছেলেটা নাক ও ডাকে? ওহ শিট ম্যান।
সে যে নিজে নাক ডাকে সেটা আলাদা ব্যাপার। সুন্দরীদের নাক ডাকাও নাকি সুন্দর হয়।
–
কেটে গেলো একটা ঐতিহাসিক রাত। বাসর রাত কিংবা ফুলশয্যার রাত।! ঘুমটা ভাঙল… না ঠিক ভাঙল না ভেঙে দিলো নুরির মা। ফোন দিয়ে গররররর গররররর আওয়াজে মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো নুরির। ফোনটা দিলো এক আছাড়। শালা এবার গররর গররর করতো কেমনে করিস।
আবার যখন চেখ বন্ধ করে বালিশ টার উপর একটা ঠ্যাং তুলে আরাম করে শুয়ে পড়ে নুরি, কিছুক্ষন পর মনে হলো ওর, আচ্ছা আমি কোথায়?
চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে।
-আমার বিয়ে হইছে না? আমি তো শ্বশুর বাড়ি। ইসসস রে মা মনেহয় এজন্যই ফোন দিছিলো। কিন্তু আমার বর কই?
তাইতো, অনিক কই? নুরি তো বিছানার মাঝখানে চিৎপটাং হয়ে শুয়ে আছে। অনিক কই?
নুরি আচমকা চমকে ওঠে। অনিক কে দেখে। অমিক সোফার উপরে এক ঠ্যাং আর নিচে আরেকটা দিয়ে মুখ হা করে ঘুমাচ্ছে।
নুরি কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে চুপিচুপি উঠে ওর ফোনটা নিয়ে এসে কয়েকটা পিকস তুলে নেয় আর হা হা হা করে হেসে ওঠে
অনিক — ইয়া আল্লাহ!! বলে ধরাস করে উঠে ছপাৎ করে মেঝেতে পড়ে যায়। কি হয়েছে কে কে??
-এই হাদা আমি রে আমি। আপনার বউ। এইখানে এইরকম ভাল্লুকের মতো শুইছেন কেনো?
অনিক মুখ গম্ভীর করে বলে,
-আপনি আমাকে রাতে তিন তিনবার গুতা মেরে ফেলে দিয়েছেন।তাই এখানে শুয়েছি। বালিশ দুইটাই আপনি নিয়েছেন।
নুরি জানে এইটা তার ছুডুকালের অভ্যাস। তবু জের গলায় বলে,
-এই শুনুন, একদম ফালতু কথা বলবেননা। বেশি কথা বললে এই ছবিগুলে না ভাইরাল করে দেব।
-আপনি কি মানুষ?
-না আমি বউ। হা হা হা….
অনিক গম্ভীর হয়ে তাকিয়ে থাকে।সামনের অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে।
–
-ভাবী, ভাইয়া উঠছেন?
দরজায় কেউ কড়া নাড়ছে। নুরি অনিকের হাত ধরে টেনে তুলে।
-আরে করছেন কি ছাড়ুন ছাড়ুন।
-চুপ একদম চুপ। বিছানায় শুয়ে থাকুন ঘুমের ভান ধরে থাকবেন। ডাকলেও সারা দেবেননা। টিশার্ট খুলুন।
-ছি: কি বলেন এসব।
-আজিব!! আপনি পোলা না মাইয়া? খুলুন।
-না কাপর খুলব কেন আমি?
-কিচ্ছু করবনা ট্রাস্ট মি বেবি।
–
নুরি অনিকের টিশার্ট টেনে খুলে দেয়। অনিক দুইহাত দিতে নিজেকে ঢাকার চেষ্টা করে।
-যান শুয়ে পড়ুন।
অনিকে বিছানায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে ওর গায়ে কম্বলটা টেনে দেয়। দৌড়ে গিয়ে টাওয়ালটা মাথায় পেঁচিয়ে।দরজাটা খোলে
-ওহ ভাবী, এতক্ষন লাগল দরজা খুলতে? ভাইয়া কই?
-ও তো ঘুমুচ্ছে কতক্ষন থেকে ডাকছি উঠেনা।
নুরি অনিকের পাশে বসে ওকে ডাকে,
-এই উঠো। সবাই ডাকছে তো।
অনিক এক চোখ অল্প খুলে দেখে নুরি ইশারায় ধমক দিচ্ছে। চোখ বন্ধ করেন।
-কিরে, ভাইয়া তো এতো ঘুমায়না। আজ এতে ঘুমুচ্ছে ব্যাপার কিরে আনু বলতো?
-আরে টায়ার্ড মনে হয়। হা হা হা…
নুরও মুচকি মুচকি হাসে।
-ভাবী, তোমাকে কিন্তু দারুন লাগছে।
-থ্যাংক ইউ সুইটি।
-আমার নাম তানহা। সুইটি না।
-ওরে বোকা মেয়ে এটা আদরের ডাক।
ওরা কথা বলছে এর মধ্যে অনিকের কাজিন রা রুমে ঢোকে। নুরি একটু আড়াল হয়।
-কিরে ব্যাটা এখনো ঘুমাস। ওঠ। কাম করছস এইবার কাজগুলা ও কর হে হে হে।
অনিক এইবার উঠে বসে।
ওর কাজিনরা এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে।
-ভাবী কইরে? তুই এখনো কাপর পরস নাই বেহুদ্দা। এমনেই আছস? ছে ছে ছে।
অনিক সাথে সাথে বলে ওঠে।
-আমার কোনো দোষ নাই।
-হ দোষ সব আমাদের। হে হে হে।
নুরি এরই মধ্যে কাপর চেন্জ করে ফেলেছে।-আসসালামুআলাইকুম।
-আরে ভাবি, আসেন আসেন। কই ছিলেন। এই বেহুদ্দা মালডা আপনারে বেশি জ্বালায়নাই তো?
অনিক মুখ গোমরা করে বলে,
-আমারে মালপোয়া বানায় খাইয়া ফেল।
নুরি হো হো করে হেসে ওঠে।
-উনি অনেক ভালো একজন মানুষ।
-বাহ, ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট পাই গেছস এইবার চ। ভাবী আজকের প্রথম রান্নাটা আপনি করবেন। আসেন জলদি।
সবাই চলে গেলে অনিক বিরক্তি নিয়া বলে, আমার টিশার্ট দেন…
নুরির মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে।
সে গিয়ে দরজা লাগিয়ে কেমন অদ্ভুত ভাবে অনিকের দিকে আসে।
-এই আপনি দরজা লাগাইলেন কেনো এখন? এমন করতেছেন কেনো?
নুরি এসে অনিকের হাত ধরে বলে…
-বেবি,চলোনা হয়ে যাক…
-কি?
-টি২০ খেলা…
নুরি ওর টিশার্ট হাতে নিয়ে ওর কোলে উঠে বসে…গা ন ধরে…
কোই নেহি হে কামরে মে কেয়া হাডিন মিলা হে পাল আজ সারারাত কারনে দো কাম বাকি…
অনিক কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে… আপু!! ছেড়ে দেন….
নুরি এক লাফে দাঁড়িয়ে যায়… আবার বসে ওর গলা টিপে ধরে…
আপুকি বাচ্চে…. হুহ.. উহহহহ এ কিরে। এরে নিয়া কি করুম? এ নিশ্চয় আকামের। কোনে কামের ই না…
কি করুম
অনিক হাঁসফাস করে।
ওরে আল্লারে মেয়ে মানুষ এমন কেমনে হয়? কি দজ্জাল… আরেকটু হলে মানহানি করে দিতো…
অনিক উঠে দাঁড়িয়ে যখন তাড়াতাড়ি করে টিশার্ট পড়তে যাবে তখন দেখে টিশার্ট ছিঁড়ে গেছে।
ড্রয়ার খুল টিশার্ট বের করে যখন তখন নুরি অনিকপর দিকে তাকায়। আর তাকিয়েই অবাক হয়ে যায়…
ওয়াও… সিক্স প্যাক বডি।খেয়াল ই করিনি।
অনিকের কাছে গিয়ে সে বলে..
-এই আপনি তো অনেক সেক্সি।
-ছিহ আপনার মুখের ভাষা এতো খারাপ। নাউজুবিল্লাহ।
অনিক দরজা খুলে একরকম ছুটে পালায়। আর নুরি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে আর হাসে।
-ছেলেটার আসলে প্রবলেম কি? কাউকে জিজ্ঞেস করাটাও হাস্যকর হবে।। এসব কেউ জিজ্ঞেস করে। কিন্তু সে এমন করছে কেনো? কিভাবে জানা যাবে আসলে কি হয়েছে….
উহহহহ বিয়া আসলেই একটা প্যারা কত স্বপ্ন ছিলে রে বাসর নিয়া। কি পাইলাম একটা সিক্স প্যাক রামছাগল।
নুরি শাড়ি পরে সেজেগুজে তৈরী হয়। ননদেরা এসে ওকে নিয়ে যায়। সকালের নাসতায় নুরি পায়েশ রান্না করে খাওয়াবে।
বের হতেই অনিকের সাথে দেখা। হাতে একটা স্টিলের বড় বাটি।
নুরি চোখ মারে ওকে দেখে। আর কাছ দিয়ে যাবার সময় ইচ্ছে করে হাতটা একটু নিচের দিকে নামায়।
অনিক সপাং করে বাটিটা ফেলে দেয় মাটিতে।
সবাই হাসতে হাসতে গড়াগড়ি।
নুরিও হাসছে।
কিন্তু অন্য সবাই হাসছে এটা ভেবে যে অনিক বউকে দেখে নিজেকে সামলাতে পারেনি। কিন্তু অনিক যে কেনো বাটিটা ফেলে দিলো সেটা নুরি ছাড়া আর কে জানে…
–
নুরি রান্না টা জানে।শখের রান্না আগেও করেছে ওর রান্না সব বারবিকিউ। ভাজা পোড়া রান্না।
ঝাঁকড়া চুলে কালার করেছে। হাতে কিসব ছাতামাতা রাবার ব্যান্ড পরে, ছেলেদের গেন্জি পরে কানো বড় হেডফোন লাগিয়ে ইয়ো ইয়ো করে আর মুরগী পোড়ায়।
ওর মা সবসময় বকতো।
-আমি যখন তেঁতুল গাছে উঠছিলাম তখন তুই পেটে জন্ম নিছিলি মনেহয়।
নুরু… তোর কি জামা নাই? তুই গেন্জি পড়স কেন?
নুরু… তোর হাতে বেন(ব্যান্ড) মাতায়(মাথায়) দেস না কেন?
নুরু… তোর কাননে কি ঝুলতাছে? আল্লারে, এতো গুলা দুল মাইনষে পিন্দে?
নুরু…কালা নেলপালিশ পিন্দস কেন? তোরে তো শাকচুন্নি দেহা যায়।
নুরু…তোর ঠোঁটে কি পিনছস? খুল খুল কইতাছি। তোরে আইজকা জুতা দা মারুম।
নুরু…
নুরু……
চলতে থাকে। মায়ের এই বকাবকি সারাদিন চলতে থাকে। আর ইয়ো ইয়ো নুরু ওরফে নুরি মাকে বোঝায়। মম, খুল খুল…
-এ ছেড়ি আমি কি খুলুম? আমারে মম কইলে তোরে জুতা দা মারুম।
দুর তুমি কিচ্ছু বুঝোনা খালি বকবক করো। প্রতিদিন কলেজে যাবার সময় মা দৌড়ানি দেয়। জামা পিন্দা যা পাজামা পিন্দা যা। কিন্তু আল্ট্রা মডার্ন নুরি কি তা শোনে?
নুরি তো ছেলেদের টিজ করা মেয়ে। মাঝে মাঝে সিগারেটে ফু দেয়া মেয়ে। যাকে কলেজে গুন্ডি বলেই সবাই চেনে।
সেই নুরি। হ্যাঁ সেই নুরি আজকে পায়েশ রান্না করবে। তাও শ্বশুর বাড়িতে।
ভাবা যায়?!!!
পলাশের সাথে চ্যালেন্জ করে বিয়েটা করেছে। কিন্তু আফসুস!! অনিকের মতো ছেলে আর তার পরিবার কেউ জানেনা নুরির ইতিহাস!! জানলে ওরা নিজেরাই পাঁতিহাস হয়ে উড়ে যেতো।
ব্রেকাপের পরের সময় কিভাবে কাটে ও কাটাবেন?
–
-কি গো দেবরানী কেয়ছে হো? আমি তোমার ভাবি হই। রাত কেমন কাটলো? হে হে হে…
নুরি একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। কিন্তু পরক্ষনে নিজেকে সামলে বলল…
-আমমমম… ইট ওয়াস ঠু মাচ নটি নটি সেক্সি নাইট।
– কি?!
-আপনার দেবরের জ্বর এসে গেছে।
-এ্যাঁ?
-ওর পাছা মানে ব্যাকসাইডে খুব ব্যাথা।
-কি?!!!!!
-ওর ঠোঁট ফুলে গেছে।
– আমি আসতেছি।
নুরি হো হো করে হেসে ওঠে।
কেমন ভাবি কে জানে, চিনেনা… কিন্তু এইসব কথা শুনে ভাবির নিশ্চয় হাগা ধরে গেছে।
অনিক্কা তোমার এবার কি হবে?
lets start a party…yo yo….
নুরি স্বভাবসুলভ দুই হাতের আঙুল ভাঁজ করে হানি সিংয়ের গান গায়,
আভি তো পার্টি শুরু হুয়ি হ্যায়…
কারো হাত থেকে ছপাৎ করে কিছু একটা পরে যায়। নুরি পেছন ফিরে তাকায়।
-ওরে…. সিক্সপ্যাকওয়ালা রামছাগল রে…
নুরি দৌড়ে যায় অনিকের কাছে…
-ওগো কি হয়েছে তোমার? দেখেছো আমি কতত ভয় পেয়েছি।দে খো দেখো আমার বুকটা কেমন ঢিপ ঢিপ ঢিপ ঢিপ করছে।
নুরি অনিকের হাতটা তার বুকের ওপর রাখে।
অনিক এক ঝটকায় হাত টেনে বলে, ছিঃ আপনি কত খারাপ।
বলেই উল্টো ঘুরে দৌড়।
নুরি তো হাসতে হাসতে শেষ। বেচারা শসা নিয়ে এসেছিলো। সব ফেলে দিয়েছে।
রান্নাঘরে কেউ নেই। কারণ পায়েশটা নুরিকে একলাই রান্না করতে হবে। অনেকে ঘুম থেকে উঠেছে অনেকে উঠেনি।
নুরি শসাগুলো কুড়িয়ে নিচ্ছে এমন সময় ওই ভাবিটা আবার আসে।
-নুরি….!!
-আরে হটি ভাবীজী!!
-হটি!!? আরে ছাড়ো তুমি শসা কুড়াচ্ছো কেনো?
-আপনার দেবর ফেলে দিলো সব।
-ওহ.. হে হে হে… ও এরকম ই। সব খালি তাড়াহুড়োয় ফেলে দেয়।
-সব মাল ই এরকম করে ফেলে দেয়?!
-হ্যাঁ
-বলেন কি। রাখতেই পারেনা?!! ওহ নো শিট ম্যান
– তেমার কি হলো?
-কিছুনা। এজন্য এই অবস্থা।সব ফেলে দেয়।
ডোন্ট ওরি অনিক বাবু…এ ক চুটকি পানি কা কিমত তুম কেয়া সামঝো গে অনিক বাবু…
তোমারে আটকানোর ব্যবস্থা করতাছি ওয়েট হানি। হে হে হে….
ভাবী অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। এই মেয়ের মাথায় কি সমস্যা আছে?
হু হু ভাবি জানেনা। নুরি তো নুরি নয়। নুরি তো চিজ বারি হ্যায় মাস্ত মাস্ত…
–
-উমমমমমমমমম…ভাবী u r too good… ammm… delicious… ভাবী আপনি এতো মিষ্টি করে রান্না করেন।।। উফ দারুন.. আপনি দেখতেও যেমন রান্নাও…
কথাগুলো অনিক শেষ করতে দেয়না…
-এই বেটা এতো কথা কস কেন? খাইতে বইছস খা।ফাজিল।
নুরি এইবার মাননীয় স্পিকার হয়ে গেছে এইটা কি শুনলো সে? অনিক ধমকাতে পারে?
ওয়াও!! It’s unbelievable!!
-তোমাকে আর একটু পায়েশ দেই? দেইনা?
-না না আমি এতো মিস্টি খাইনা।
-মিস্টি খেতে হয়। খা খা। শরীরের জন্য উপকার।
অনিক চোখ মুখ কুচকে খাচ্ছে কাউকে কিছু বলেনা। সবাই মজা নিচ্ছে। কিন্তু এই যে শাকচুন্নি টা যে আমার মাথার উপ্রে বসল এইডা নামাই কেমনে?
নুরি একটু মুখটা নিচু করে বলে, সে আর হচ্ছেনা। আপনাকে পায়েশ খাইয়ে পায়েশ বের করে ছাড়ব অনিকর গলায় আটকে যায় খাবার। এমন কথা শুনলে গলা তো গলা ডায়রিয়া রুগিরও সব আটকে যাবার কথা!
–
বউভাত।
নুরি তো এমনিই অপ্সরী। তার ওপর সেজেছে। সবার নজর তার ওপরে। বিশেষ করে অনিকের বন্ধুরা।
-অনিকের কপাল রে…
ইসসসস।।।। এমন একটা বউ পাইছে রে।
-কপালে ঝাড়ু মার ।এমন বউ তো দুরপর কথা বউ জুটবে কিনা কে জানে।
-আচ্ছা একটা ব্যাপার তো ভুইলা গেছস মনেহয়।
-কি কস? কিছে?
-অনিকের ওই ব্যাপারটা ভাবী জানে?
-কোনটা?-আরে ওই যে ওর প্রবলেমটা..
-দুর ব্যাটা দেহস বউ কেমন হাসতাছে।
-হ তাইতো দেহা যায়। কেমনে কি বুঝলামনা।
-তুমি মুরি ভিজাই খাও। অত বুঝা লাগতনা।
ধুপধাপ মাইর।
কে মারে?
-হারামজাদার দল। আমার বউ আমার বউয়ের ভাত আর তোরা গবেষনা করতে আইছ?
নিমকহারাম। শালারা। দুর হ।
-ও দোস্ত ভুল বুঝ কেন? আমরা তো ভালো কথা বলতেছিলাম। সমস্যা হইলে তোমারে ডাক্তার দেহাইমু।
অনিক আবার মারামারি শুরু করে।
হারামজাদা। তুই যা ডাক্তার দেখা। আগে মাথার পরে ইয়ের।
–
নুরির বিয়ের দ্বিতীয় দিন।
বাবার বাড়িতে এসেছে। অনিককেও আসতে হয়েছে। বাধ্যতামূলক। আসতেই হবে। ফিরতি বিয়ে বলে কথা।
অনিক কিন্তু যথেষ্ট সুপুরুষ একটা ছেলে। সিক্সপ্যাক। চুল গুলো তো জাস্ট ওয়াও। একটু রেডিশ রেডিশ। সেগারেট খেত মনেহয়। ঠোট গুলো পিংক নয় ঠিক তবে ওয়াও! ৫’৮” লম্বা। গায়ের রংটা ঠিক ফর্সা নয় আবার কালোও নয়। মাঝামাঝি।
যে কেউ দেখলে প্রেমে পরে যাবে। শালীর দল তাই এই হেন্ডসাম দুলাভাইয়ের ওপর হুমরি খেয়ে পড়ছে। নুরি কি কম যায়? নুরির উচ্চতার জন্য মডেলিং এও নাম লিখিয়েছিলো। আব্বা আম্মার পিছার বারি খাইয়া থামছে। ৫’৬” লম্বা মেয়েটার কোকরানো চুল আর স্টাইল.. ক্রাশ খেয়ে যে কেউ কোমায় চলে যেতে পারে!
অনিকের সাথে মানিয়েছে দারুন। সব ই ঠিক আছে। কিন্তু ছেলেটার বউভীতি কেনো এতো? নুরি অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে শালীর দলের সাথে অনিকের সে কি হাসাহাসি। কি কি যে বলছে আর মেয়েগুলা হেসে একটা আরেকটার গায়ে এমন করে ঢলে পড়ছে যেনো জীবনেও এমন কথা শুনেনাই।
অনিক কি উর্দু ভাষায় কথা বলছে।? নুরির মেজাজ একবার খারাপ হলে কিন্তু অনিকের খবর আছে। অনিক কি তা জানে?!
নুরি অনিকের পেছনে এসে দাঁড়ায়। সব মেয়েগুলো মানপ ওর কাজিনেরা কেমন ঢোক গিলে। আস্তে করে উঠে যায়।
-আরে তোমরা কই যাও? গল্প তো শেষ ই হইলোনা। গল্প না শুনবা?
কি আজিব!! সবাই মনেহচ্ছে ভুত দেখছে!
– গল্প। না? গল্প?
অনিক মাথা ঘুরিয়ে দেখেই আ… বলে একটা চিৎকার দিয়ে ছপাৎ করে চেয়ার থেকে পরে যায়।
লা ইলাহা ইল্লা আন্তা…..
-আজকে ঘরে আসেন। আপনার গল্প কোন দিক বাইর করুম দেখবানে। গল্প বাইর হয় অন্য কিছু বাইরায়না? আইজকা আপনারে চটকাইয়া খামু।
নুরি অনিকের শার্ট টা ধরে টেনে তোলে ওকে ওপরে। অনিক বেচারা এমন ভয় পাইছে যে কপাল দিয়ে ঘাম বাইর হয়ে গেছে। নুরি এমন মজা পাইছে। সে আরো ভয় দেখায়।
-এই আপনি হিসু করে দেননি তো? দেখি দেখি…
-এই এই কি কি করেন?…
নুরিকে ঠেলে দিয়ে এক লাফে দুই হাত দুরে সরে আসে।নুরি তো হাসতে হাসতে শেষ। অনিক ওখান থেকে চলে যায়।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে এই ব্যাপারটা নুরির মা দেখে ফেলে।
রাতে খাওয়াদাওয়ার পর অনিক সবার সাথে যখন গল্প করছিলো তখন নুরির মা নুরিকে কাজের অজুহাতে ডাকে।
-মম এখন কি কাজ? আমার বিবাহ হইয়াছে। সো আম নট গননা টু হেল্প ইউ।
-মম কলি তো জুতা দা মারুম তোরে।
-উহহহহ….কি বলবা বলো.
-তুই না আমার সোনা মা। বিয়া হইছে এহন এমুন করলি চলে? তুই এগিন কি পিনছত? গেন্জি পিনছত কেন? শাড়িডি পিন।
জামাই কত বালো মানুষ। তুই হের লগপ এমুন করতাছত তোরে যদি বারিত্থে বাইর কিরা দেয় কিরিবি?😠
-এ্যাঁ?!! কি সব বলো তুমি? মা তুমিও না…
এমন সময় নুরির চাচাতো বোন আসে। একমাত্র এই বোনটিকেই সে একটু পছন্দ করে ।কারণ এই বোন তার কোনো কাজের সমালোচনা করেনা। এই যে এখন সে জিন্স আর গেন্জি পরে আছে এটা নিয়েও সে কিচ্ছুটি বলবেনা।
-বুবু, কই আছিলা। আসো আসো।
নুরির মা বুবুকে চোখের ইশারায় কি যেনে বলে গেলো। তোরা গল্প কর আমি আইতাছি।
-আমার নুরু, সোনা বাচ্চাটা কেমন আছেরে? নতুন বউ কি সুন্দর হইছে। মা গো মা!!
নুরি মুখ ফুলিয়ে বলে,
-সুন্দর না ছাই।
-কেনো রে? কি হয়েছে আমার পরিটার?
নুরি বুবুকে জরিয়ে ধরে।
-কি হয়েছে নুরি, বল আমায়।
-বুবু….
-কি বলনা..
নুরি ঠিক বুঝে উঠতে পারছেনা কিভাবে কি বলবে।
-বুবু..আমার মনেহয় অনিকের কোনো প্রবলেম আছে।
-কি বলিস?!
-হুমমম….
-কিরকম?
-আমাকে ভয় পায়। কাছে আসা তো দুরে থাক।
-বলিস কি?!
-হুমম..
-এমন সুপুরুষ একটা ছেলে। কোনো প্রবলেম থাকলে তো এভাবে বিয়ে দিতেনা।
-বুবু তুমিও যা বোকা না… পলাশের যে প্রবলেম তা কি আমি ছাড়া কেউ জানে? আমি দেখছি বলে জানি ওই পিনাটলুল রে…
বলেই নুরি জিভে কামর দেয়।
-কি বলিস এসব?!
-না কিছুনা। বলছি কি প্রবলেম কি ভয় সেটা তে জানিনা। ওর বাপমা ভাইবোন কেউ জানেনা মনেহয়। কি করব বুবু…
-মহা ঝামেলা তো… ঠিকআছে। আমি ঠিক যেভাবে বলব তুই সেভাবে কাজ কর। দেখবি তোর বর বিড়ালের বাচ্চার মতো লুটেপুটি খাবে।
-সত্যি!!!😘
নুরি বুবু কে খুশীতে জরিয়ে ধরে। স্টাটাস দিতে হবে তো…
কম্প্লিটিটেড বাসর নাইট যেটা এখন পর্যন্ত দেয়া হয়নাই।
–
নুরি আজকে সিল্কের শাড়ি পড়েছে… কপালে টিপ, হাতে কাঁচের চুরি… চোখে কাজল… বাহ বাহ দারুন করে সেজেছে। অনিক মুখ চোখ ভার করে বসে বসে গেম খেলছে। নুরি ঘরে ঢুকেই থ হয়ে গেলো। সে তো ভেবেছিলো আজকে অনিক ভয়ে ঘরেই ঢুকবেনা।
-জানু….
বলেই অনিকের গলা জরিয়ে ধরে নুরি।
অনিক হাত থেকে ফোনটা ফেলে দিয়ে আল্লারে.. বলে চিৎকার দিয়ে সরে যায়।
– আপনাকে আজকে লুটব আমি।
-আপনি দুরে থাকুন প্লিজ।
-ন। না সে তো হবেনা। এই রাত তোমার আমার…
আচ্ছা আপনার প্রবলেমটা কি বলেন তো?
আপনার কি রাস্তাঘাট কিছুই নাই?
-কিসের রাস্তা?!
– **** রাস্তা।
-ছি: আপনার মুখের ভাষা খুব খারাপ।
নুরি ধীরে ধীরে অনিকের কাছে আসে। অনিক জরসর।
প্রুভ করুন তাহলে।
-কি?!
-আপনি পুরুষমানুষ। প্লিজ…স্টাটাস দেব আজকে বিয়ের দুইদিন হয়ে গেলো। কিচ্ছু হইলোনা। বান্ধবীগুলান জ্বালাই মারতেছে। আমি কি কইতাম?
-দেখুন আপনি ভুল করছেন।
এইবার নুরি খেপে যায়।
-এই ফাজিল বিয়া করছো কেনো তাইলে? হ্যাঁ? বডি বানায়া সুন্দর ফেইস দিয়া মেয়েমানুষ পটাও আর বউয়ের সাথে আপু!! আপনি!!! এক চটকানায় সব ফাইজলামি বাইর করুম। চিনো আমারে তুমি? চিনো? ফিডার খাওয়া বাইর করতাছি তোমার। ফাজিল কোথাকার, ভংচং মারো আমার সাথে? আইজকা যদি বাসর না করছো তো তোমারে গাছের উপ্রে উঠায়া ঝুলামু, তেমার চুলডি কাইটা দড়ি পাকামু।
হাদা, রামছাগল কোথাকার।
অনিক হা করে চেয়ে থাকে।ঢোক গিলে। নুরির মাথার সাথে সব হট হয়ে গেছে।
অনিকের গলা জরিয়ে ধরে অনিককে অবিরাম আদর করে। অনিক নিঃশ্বাস নেয়ার চেষ্টা করে।
পারেনা। বাপরে যা শক্তি নুরির।
টানা ১০ মিনিট কার্যক্রম চালিয়ে যখন অনিককে সে ছেড়ে দেয় তখন অনিক হা করে নিঃশ্বাস নেয়।
এ কিরাম অত্যাচার?!
নুরি বিছানায় পাঁচমিনিট বসে থাকে। অনিক কিন্তু তখনও দাঁড়িয়েই আছে। সে এতোটাই ভ্যাবাচ্যাকা খাইছে যে নড়ার সাহস হারাই ফেলছে।!
নুরি আবার উঠে আসে। এবার গিয়ে লাইট অফ করে দেয়।
-লা… লাইট অফ করলেন কেনো? কিছু দেখা যায়না তো।
-দেখাট লাগবেনা। আমি খুঁজে নেব।
নুরি অনিকের কাছে এসে গান ধরে… রাত আকেলি হেয় বুঝ গায়ে দিয়ে….
আসোনা জানুটুসসস….
অনিককে টেনে বিছানায় নিয়ে যায় নুরি…
বাকিটা ইতিহাস….
–
সকালে যখন অনিকের ঘুম ভাঙলো তখন দেখা গেলো অনিকের বুকের ওপর এক পা তুলে দিয়ে নুরি ঘুমাচ্ছে।
অনিক উঠে বিছানায় বসে ঝিম মেরে বসে থাকে। মাথাটা চরম রকমের ব্যাথা করছে। মনেহচ্ছে খুলে পড়বে। চোখ খুলে তাকানো যাচ্ছেনা।মাথার ভেতর ব্যাথার সাথে এটাও ঘুরছে, আমি ট্রাউজার পড়ছি ক্যান?
কাল রাতে তো প্যান্ট পড়ে শুইছিলাম।
টিশার্ট ও নাই।
আল্লাহ তুমি কি শেষ পর্যন্ত আমার সাথে সেটাই করলা যেটা আমার আর আমার বউ দুজনের জন্যই বিপদের?
কিন্তু মাথা ব্যাথা করছে কেনো?
অনিক বিছানা থেকে উঠার চেষ্টা করে যখন পারছিলোনা তখন আবার শুয়ে পড়ে।
দরজায় কড়া নেড়ে যাচ্ছে সবাই প্রায় আধা ঘন্টা ধরে।!! ফোন ধরছেনা, দরজা খুলছেনা। কি হলো অনিক-নুরির?! নুরির মা তো মরা কান্না জুরে দিয়েছে।
এবার কি তবে দরজা ভাঙা হবে?
নুরি….নুরি…
অনিক… অনিক….
কারো কোনো সাড়া নেই।
দরজা ভাঙা ছাড়া কোনো উপায় নাই।
দরজার লকটা সবাই মিলে যখন ভাঙছে তখন বুবু দৌড়ে এলেন।
-কি হয়েছে কি হয়েছে?
বুবুকে দেখে নুরির মা যেনো আরো এনার্জি পেলেন।
-মুনিয়ারে… নুরির কি হইলো রে।। দরজা তো খোলেনা রে… জামাই ও শুনেনা রে..
কি হইলো রে…
উহহহ চাচীআম্মা রে… থামেন তো রে….
কি হইছে চাচ্চু? দরজা ভাঙছেন কেনো? নুরির কি হইছে?
– নুরি অনিক কেউ শুনতেছে না। প্রায় এক ঘন্টা থেকে ফোন দিচ্ছি ডাকতেছি।
মুনিয়া বুবু কিছুক্ষন চুপ থাকে। এবার ঢোক গিলে বলে,
-ইয়ে মানে চাচ্চু দরজা টা ভাঙেন। কিন্তু আমি আগে ঢুকব।
দরজা না ভাঙলেও চলতো মনেহয়। ওরা ঘুমাচ্ছে।
-তুমি কেমনে জানলা?
-আ… আমি মানে না মানে, বুঝাই যায় ঘুমাচ্ছে। ইয়ে মানে, বলছিলাম যে ইয়ে চাচ্চু…
-মুনি কি হছে? কি লুকাইতাছস তুই? এমুন এ উ করস কা? দেক নুরি গুমায় তুই জানলু কেমুন করে?
চাচীআম্মা ওকে এমন ভাবে ঝাঁকায় যেন মুনি একটা এটিএম বুথ। টাকা বের হচ্ছেনা এজন্য তিনি ঝাঁকাচ্ছেন। বের হ টাকা বের হ!!
বুবু কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে,
-চাচীআম্মা আমি খারাপ চাইনাই। বিশ্বাস করেন।
-কি করছত তুই?
-আমি… আমি ওদের ভাং খাওয়াইছি।
-কি?!!!!
-কি?!!!!
-কি?!!!
এতগুলো মানুষের কি??!! শুনে মুনি ভেক করে কেঁদে দেয়।
-আমি তো ভালো চাইছিলাম।
নুরির আম্মাজান মাথা ঘুরে পরে গেছেন। কি চিন্তা করে আল্লাহ ই জানে। চাচ্চু, নুরির ভাই আর মুনি। হাবা হাসমতের মতো দাঁড়িয়ে আছে। দরজার লক ভাঙা হয়ে গেছে। আম্মাজান ও অজ্ঞান হয়ে গেছেন। মুনিয়া বুবু চোখ মুখ মুছে কথা বলে ওঠে।
-চাচ্চু চাচীআম্মাকে ঘরে নিয়ে যান। আমি দেখতেছি।
আব্বাজান এতোটাই তব্দা মেরে গেছেন যে কোনো কথা বলেননাই।
আর নুরির ভাই বুবুর কথা শুনে একটু পর পর ফিক ফিক করে হাসে।
-বুবু, আমিও যাই ভিত্রে তোর সাথে।
-সর বাল।
মুনিয়া নুরির বয়সি ভাইটাকে দাবরানি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে।
ইয়া আল্লাহ কি সিনারি যে দেখতে হবে
মুনি বুবু ঘর থেকে বের হয়ে দেখলো নুরির ভাই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
-এ ব্যাটা এনে কি করছ? যা তেঁতুল পানি নি আয়। দৌড় দে। আর শোন কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে বলবি আপু খাবে।
-নুরি… নুরি… অনিক… অনিক….
মুনি ঝাঁকুনি দেয় দুইজনকেই। প্রায় পাঁচমিনিট এমন করে ডাকতে ডাকতে দুজনেই চোখ খুলে। মুনিয়া তেঁতুল পানির গ্লাস নুরির হাতে দেয়।
-খা।
-আঁইইই বুবু মাথা ঘুরান্টি দিতাছে ক্যা?
-এই বালডা, তোরে খাইতে কইছিলাম? তুই খাইছস কেন বালডা।
-ইয়াক… সকাল সকাল এডি কিখাওয়াইলা?
-গু। বালডা। অনিক রে দে। ঝিমাইতাছে।
অতি চালাকের গলায় দড়ি বলে একটা কথা আছেনা? মুনি বুবু হইলো সেই অতি চালাক। নুরি কাল বলছিলো অনিকের প্রবলেমের কথা, এর সলিউশন স্বরূপ সে এই খাবার দিয়েছে। নুরিকে পইপই করে বলেদিয়েছিলো, ভুলেও তুই খাবিনা। অনিকরে খাওয়াইবি।
কিন্তু রাতের বেলা কি হয়েছিলো ওরা দুজন ই জানে। দুজনেই মাতাল হয়ে গেছে, কু্মভকর্ণের মতো ঘুমাচ্ছে।
দশ মিনিট পর।
-আপনি কাল আমাকে কি খাইয়েছিলেন?
-আপনি কানতেছেন ক্যান? আপনারে কিছু করছি কিনা মনে করতে পারছিনা।
বাল,,, মেজাজ মুজাজ বহুত খারাপ আছে।
বুবু, তুমি যাও তে যাও।
খুদা লাগছে খাবার দেও যাও।
যাও না ক্যা? যাও।
নুরির ধমকে বুবু উঠে যায়। আজ কি কান্ড করে বসে কে জানে। নুরি কিছুক্ষন ঝিম মেরে বসে থাকে। তারপর উঠে অনিকের কাছে যায়।
-আপনার সাথে আমার কিছু হয়নাই?
-জানিনা…
নুরি হাত মুঠ করে অনিকের নাজ বরাবর আনে
— একদম ফাটিয়ে দেব আপনার শিমের বিচি। কাপুরুষ। আজকের পর থেকে আমার চোখের সামনে আসবেন তো ফাটিয়ে দেব।
বলেই নুরি রুম থেকে বের হয়ে যায়। বাড়ির সবাই চুপচাপ। নুরি আজকে প্রচন্ড রকম রেগে আছে। ৯ নম্বর বিপদ সংকেত। যে কোনো সময় সব লন্ডভন্ড হতে পারে।
-আপনি যাবেননা?
-না।
-ভালোকরে ভেবে দেখুন।
-ভাবার কি আছে? এরকম ভেড়ার সাথে সংসার করা সম্ভব?
অনিক চুপ করে আছে।
-আচ্ছা আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দেবেন?
-হুম
-আপনি কি হিজড়া?
-কি?!
-নাকি নাই কিছু?
-কি বলেন এসব?
-বউ করছেন কেনো?
-আমি এর জন্য দায়ী না।
-কে দায়ী?
-বাবা।
-বাবাকে বিয়ে করতে বলতেন তাইলে। দেখুন অনিক, আমি আজ আপনার সাথে কোনো ফান ফাইজলামি কিছু করবনা। জাস্ট সিরিয়াস কিছু কথা বলব।
-হুম
-আমি বহুবার জিজ্ঞেস করেছি আপনার প্রবলেম কি আপনি বলেননাই। এখনো, ইভেন এখনো বলছেননা। এইভাবে তো আর যাই হোক সংসার হয়না।
-আপনি আমার সাথে থাকবেননা?
-না।
-আচ্ছা নুরি…. সেক্স ছাড়া কি সম্পর্ক হয়না?
বিয়ে মানেই কি সেক্স?
-না কিন্তু এটাও জীবনের একটা অংশ। জৈবিক চাহিদাটা আমরা কেউ অস্বীকার করতে পারবনা। চাইলেও না।
-যদি আমি আপনার সেই চাহিদাটা মেটাতে না পারি?
-তবে এইভাবে বিয়ে করাটা আপনার ঠিক হয়নি মোটেও। শুধু আমার না আমার ফ্যামিলির সম্মান টাও আপনি নষ্ট করে দিলেন।
অনিক দীর্ঘশ্বাস ফেলে জিজ্ঞেস করে,
-আপনি কি আমার কথা শুনবেন আজ?
নুরি কঠিন কন্ঠে বলে,
-না। প্রয়োজন নাই। আপনি আসুন।
অনিকের কি চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে? কি জানি হয়তো। নুরি কোনো কথা না বলে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। অনিক পিছু ডাকে।
-শুনুন।
-আবার কি?
-একটা অনুরোধ রাখবেন?
-না।
-আপনার পরিবার আমার পরিবারকে অসম্মান কটুক আমি সেটা কেনোভাবেই চাইনা। আমার বাবা অনেক ভালো একজন মানুষ। এই ব্যাপারটা মেনে নিতে পারবেননা।
-তো আমি কি করব?
-আপনি শুধু এইটুকু উপকার করেন, কাউকে কিছু বলিয়েননা। আপনি আমার সাথে না থাকুন কিন্তু সেটা এখনি প্রকাশ করবেননা।
-আদেশ?
-না অনুরোধ। প্লিজ। আপনার জীবন আপনার মতোই সাজান। আমি স্বামীর অধিকার নিয়ে আসবনা। শুধু কাউকে কিছু বলবেননা।
-অধিকার নিয়ে আসবেন? আপনি?!! হা হা হা।
অনিক অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে। কষ্টটা লুকানোর দরকার ছিলোনা। নুরির কোনো ফিলিংস হচ্ছেনা তাকে নিয়ে।!! নুরি ঝড়ের বেগে চলে গেলো। বাড়ির সবার কাছে বিদায় নিয়ে অনিক একাই চলে গেলো। এরপর শুরু হলো তার মায়ের হাউকাউ।
নুরি কানে এয়ারফোন লাগিয়ে চুপচাপ দোলনায় দোল খাচ্ছে। মা তার সামনে এসে যখন লম্ফঝম্ফ করছিলেন তখন নুরি বলল,
-আচ্ছা মা, তুমি যাওনা ওই বাড়িতে।
-কি?!!!
তোরে পেটে দরছিলাম?
-জ্বি মাতা, আমি আপনার ই কন্যা।
নুরি আবার কানে বিচি ঢুকিয়ে লা লা লা করতে করতে চলে যায়। আর ওর মা বুকে হাত দিয়ে বসে থাকে। এই কি মানুষ? নাকি মেয়েমানুষ?!
–
-বৌমা ফোন ধরছেনা। সত্যি করে বলতো কি হয়েছে? কেনো এলোনা? নতুন বিয়ে হয়েছে তোদের। অথচ বৌ নাকি আসতে চাইলোনা।
-বাবা, আমি কি বললাম শুনোনাই? নুরি একটু অসুস্থ। আসবে। আমিই বললাম আসার থাকতে।
-আচ্ছা শোন…
– বাবা পরে কথা বলি? অনেকগুলো কাজ জমে আছে।
অনিক বাবাকে আর ফ্লোর দিলোনা। ল্যাপটপ নিয়ে বসে গেলো। বাবাও আর কিছু না বলে চলে গেলো। কি জানি কি হয়েছে ওরাই ভালো বুঝবে।
–
কেটে গেছে বেশকিছুদিন।
নুরি এখনো যায়নি। সে বাসায় থাকেনা এখন ফুপির বাসায় থাকে। বাসায় থাকলে সবাই জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে? তাই ফুপির বাসায় সে চলে গেছে। অনিকের সাথে ভুলেও যোগাযোগ করেনা। অনিক ওকে ফোন এখনো দেয়, এসএমএস দেয় কিন্তু নুরি রেসপন্স করেনা। নুরি কানাডায় যাবার ট্রাই করছে। এরমধ্যে একদিন নুরি শপিংয়ে গেলো। ফুপির ছোটো মেয়েটাকে নিয়ে। আগেও যেতো। কিন্তু সেদিন ঘটে গেলো ঘটনাটা। কফিশপে বসেই দেখা হয়ে গেলো…পলাশের সাথে। একেবারে চোখাচোখি।
পিনাট…(নুরি পলাশকে ডাকে)
ছেঁচকি….(পলাশ নুরিকে)
আর কোনো কথা নাই। নুরি ওখান থেকে বের হয়ে আসে। কিন্তু পলাশ কি ছেড়ে দেবার পাত্র? নুরির পিছে পিছে আসে।
-ওই ছেচকি… ইয়ো মানে নুরি…. শোনো.. নুরি…
-এই হারামজাদা ছেচকি তোর আম্মা তের আব্বা।
-তুই বলাসনাই এখনো? তুই চাস সবার সামনে তোরে সেক্সি কই?
-কুফা, দুর হ।
-তের জামাই কই? ভালো হ্যান্ডসাম জামাই পাইছস?
-তোর কি বে? জ্বইলা মর।
-আমি জ্বলুম ক্যা?
-পিছন পিছন আহিসনা। আর কথা কইছস তো ঘুসি মাইরা ফাটাই দিমু।
নুরি বোনকে নিয়ে চলে যায়। মহা বিপদ। এই পিনাট এইখানে কি করে? যদি কোনোভাবে জেনে যায় নুরি বরের কিছু নাই তাইলে পুরা কলেজে পোস্টার লাগাইবো। আল্লাহ বাঁচাও
নুরি কয়েকদিন বাসা থেকেই বের হয়নাই। ভয়ে। ফোন অফ ফেইসবুক একাউন্ট ডিএক্টিভ। সবাই পিক চাইতো। নুরি বলতো..
-এখন পর্দা করি। পিকস তুলিনা।
সবাই হাসে, নুরির এমন কি হইলো যে এখন পিকস ই তুলেনা অথচ এই মাইয়া কলেজের গুন্ডি মাইয়া। বাইক নিয়া সবাইরে দৌড়ানি দেয়। কিন্তু নুরির কি হইলে তাহা তে কেবল নুরিই জানে। তারপরেও নুরি কিছুই জানেনা। অনিকের কথা শুনেনাই নুরি। বহু অজানা বিষয় কে মনমতো গড়ন দিয়া নুরি তাহার জগতে ডুবিয়া গেছে। মাঝেমাঝে অন্যের কথাও শুনিতে হয়। না শুনিলে বিপদে পড়তে হয়। এইবার নুরি তাহা বুঝিবে।
–
-তুই বাইরে বেরোস না কেন? কি হইছে?
-কিছু হয়নাইতো।
-পার্লার যাইতে হবে। শপিং আছে কিছু। চল আমার সাথে।
নুরি চুপ মেরে যায়। কি বলবে ফুপিকে যে পলাশের ভয়ে সে যায়না? তাই কি বলা যায়।নো ওয়ে!! অনিকের সাথে সে থাকবেনা এটা দুই ফ্যামিলি কনফার্ম হয়ে গেছে। বিয়ের পরদিন ই যে মেয়ে পালিয়ে যায় সেখানে বলার অপেক্ষা রাখেনা যে ছেলের প্রবলেম আছে। যথারীতি অনিককে নিয়েও তার বাবার টেনশন আর প্রশ্নের সংখ্যাও বেড়ে গেছে। অনিক এখন কলকাতায়। বন্ধুর বাড়িতে।
অনিকের আত্মীয়দের কাছে ব্যাপারটা ধামাচাপা দেয়া হয়েছে। পাগল?! বলা যায় এসব কথা? কিছু একটা ব্যাবস্থা করে তারপর সব জানাতে হবে।কেউ যদি জিজ্ঞেস করে ছেলে -বউ কই?
কলকাতায়।
অনিক ওখানে বন্ধু+কাকাতো ভাইয়ের বাসায় আছে। ওখানে একটা আইটি ফার্ম এ তার ভাই + বন্ধু জব করে। অবস্থাও বেশ ভালো। ভাবীও খুব ভালো একটা মানুষ।
অনিকের সাথে নুরির এই ছাড়াছাড়ির ব্যাপারটা ওর বন্ধ+ভাই শিমুল জানে। কিন্তু একচুয়াল কারণ টা জানা হয়নি। কাজের চাপে আর জানা হয়নি।
অনেকদিন এরকম চলে যাবার পর একদিন। একদিন শিমুলের বউ বাপের বাড়ি গেলে, বাসায় দুজনে যখন থাকল, তখন শিমুল ওকে জিজ্ঞেস করলো ঘটনা কি ঘটেছে,
-আমি জানতে চাইনি কারণ তোর ভাবী ছিলো।
এতোদিন কিছু বলিনি। কিন্তু আজ আমি সবটা শুনব। ছোটোবেলা থেকে একসাথে বড় হলাম, আমি জানি তোর মতো ছেলে দুইটা হয়না। এখন বলতো নুরি চলে গেলো কেনো?
-জানিনা।
-মিথ্যে কথা বলিসনা। তুই জানিস। ওর কি অন্য কোথাও এ্যাফেয়ার ছিলো?
-হুম।
-তুই জানলি কি করে?
-ওর বয়ফ্রেন্ড টাই আমাকে জানিয়েছিলো।
-আর একারণে তুই ওকে টাচ ই করিসনাই।তাইনা?
-না ঠিক তা নয়।
-তাহলে?
-কিছুনা…
-অনিক, তুই যদি এখন না বলিস কিভাবে সব ঠিক হবে?
অনিক চুপ করে আছে….
-কিরে… দুর বেটা। আমার কাছে তুই শরম পাস। অথচ একসাথে ন্যাংটা হইয়া গোসল করছি। হা হা হা…
-শিমুল….
-বল…
-আমার একটা প্রবলেম আছে।
-কি?
-তখন এইচএসসি ইক্সাম দিয়েছি কি দেইনি… তুই কলকাতায় চলে এলি.. তখন।
তুই তো জানিস ছোটো বেলা থেকেই একটু ফাজিল ছিলাম বেশি।
একদিন…..
ইয়ে করতে গিয়ে মাঝপথে কি হলো আটকে গিয়ে ভিষন অসুস্থ হয়ে পড়লাম। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো। ডাক্তার যা তা বলে গালি দিয়ে একেবারে শেষ করে দিলো। কারণ… আমার ইয়ে খুব ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে। ওষুধ দিলো, ঠিক হলোনা। শেষে অপারেশন করাতে হলো। শিমুল তব্দা খেয়ে গেছে অনিকের কথা শুনে।
-তা তারপর?
-অপারেশনের পর সুস্থ হলাম ডাক্তার বলল, আবার একই রকম কাজ করলে এবার কেটে ফেলে দিতে হবে।
কিন্তু….
আমি একদিন করে ফেললাম।
-কি?!!!
-আর তখনি ব্যাথায় প্রায় অজ্ঞান। কারণ তখনও পুরেপুরি সুস্থ হইনাই। এরপর ডাক্তার আমাকে বলে দিলো যে আমি কখনো করতে পারবনা….
-সেটা বুঝলাম কিন্তু বউয়ের সাথে থাকলে কি প্রবলেম?
-আমার কাছে মনেহয় তারও প্রবলেম হবে। আমি এই বিষয়টাকে খুব বেশি ভয় পাই রে দোস্ত।
-এটা কবেকার ঘটনা?
-এইতো… চার/পাঁচবছর আগের।
-গাধা! এতোদিন কি তোর ঘা শুকায়নাই? তুই এতোদিন কিছু করসনাই?!”
-না।
-কি?!! আছিস কেমনে?!
-যেভাবে আছি।
-আর এজন্যই নুরির সাথে কিছু করসনাই?
-হু
-তুই আসলে একটা রামছাগল। আরে বেটা ডাক্তারের কাছে যাইতি।
-গেছিলাম।
-কি বলছে?
-প্রবলেম নাই।
-তাইলে?
-আমার ওই ব্যাথার কথা মনে পড়লেই মেয়ে দেখলে ভয় লাগে।বউ তো আরো ভয়ের জিনিস। নুরির কাছে সেক্স সব। ও বলেছে, এটা ছাড়া কেউ চলতে পারেনা।
-ঠিক ই তো বলছে।
-কেনো? আমি আছিনা?
-তুই তো অটিস্টিক এ্যাবনরমাল। নুরি কি তোর মতো? গাধা।
এটা তোর একটা ভয়। আর কিচ্ছু না।
-নারে, আমার কাছে মনে হয় এটা করলে আমি মরে যাব।
-হা হা হা!!! তুই যে এতো কিছু মনে নিয়ে আছিস বেটা আগে জানলে তোর বাসর রাতে আমি দাঁড়াইয়া তোরে শিখাই দিতাম।
-ফান মনে হচ্ছে তোর? কাউকে কখনো এই বিষয়টা নিয়ে বলিনাই। তোকে বললাম ফার্সট।
-নুরিকেও বলসনাই?
-না। বলতে চেয়েছিলাম সে শুনলইনা।
-তুই ওকে আগে কষ্ট দিবি তারপর বলবি তা হয়? আমি যখন শুনলাম তখন সব ওকে করে দেব। টেনশন নিসনা।
কিন্তু নুরির প্রেমিকের সাথে এখন আবার ওর রিলেশন হয়নি তো? এটা হলে তো প্রবলেম। নুরির সাথে একবার কথা হলে ভালো হতো।
-ওর ফেইসবুক একাউন্ট আছে তো।
-আরে সাবাশ।!!
তুই টেনশন নিসনা সব ঠিক হয়ে যাবে।
অনিক চুপ করে বসে থাকে। সব কিছু কি এতো সোজা? চাইলেই কিন সব ঠিক করা যায়? নুরি তো অনিককে পছন্দই করেনা। তার ওপর আবার জুটেছে পেছনে পলাশ… এবার কি হবে?
–
নুরি ফুপির সাথে পার্লার যাবে আজকে।
আজকে নুরি স্কার্ফ পড়েছে! হোয়াই?!
-পর্দা করুম। অনেক তো তিরিংবিড়িং করলাম now am gonna be a cutypie.
-পিইইই…. এটা তোমাকে স্যুট করেনা।
-এই ন্যাকা ন্যাকা কথা শুনলে আমার গা টা জ্বলে উঠে। পি কিরে? পি কি? মুতবি?
আপি কইতে কি মুতা ধরে তোর? বালডা।
ফুপির ছোটো মেয়েটা যা ঢংগী একদম শখে-নাইমের মতো কথা বলে। পিত্তি জ্বলে যায়। আপি বলতে চায়না। পি বলে ডাকে নুরিকে। ওর নাম ও শখ।
নুরি পার্লার এ গিয়ে বসে থাকে কোনো কাজ করায়না। ফুপি করায়। এতোক্ষন কি বসে থাকা যায়? পার্লার টা তিনতলায়।পাশেই বিশাল বড় কসমেটিকস শোরুম। নুরি ওখানে ঢুকে। দেখে কিছু যদি পছন্দ হয়।
এটা সেটা দেখে। এক জোড়া স্যান্ডেল পছন্দ হয়। সেটারর জন্য ওখানে যারা কাজ করে তাদের ডাক দেয় নুরি।
-এক্সকিউজ মি… এই জুতাটা একটু পড়ে দেখতে চাই।
-অবশ্যই।
নুরি সোফায় বসে পড়ে। ছেলেটা এসে ওর পায়ে জুতো পরিয়ে দেয়।
-বাহ দারুন লাগছে তোমাকে।
নুরি এতক্ষনখেয়াল ই করেনাই।
প… পলাশ…তুমি?!!!
– কেমন আছো বেবি?
-তুই এইখানেও? পিছে পিছে আাইছস।?
-বেবি এইখানে তুমি আসছ। আমি আসিনাই। আমি তো এইখানে জব করি জুতা পরাই।
-তোর কপালে জুতা ছাড়া আর কিছু জুটবেওনা।
-তুমি সারাজীবন ই আমাকে ভুল বুঝলা। আগে যা হইছে হইছে। এখন তে আমরা বন্ধু হইতে পারি। তুমি আরেকজনের বউ মানে আমার ভাবি। এখন এমন না করলেও পারো।
আমি কি কিছু করছি তোমার সাথে এখন?
দুজনার দুটি পথ বেঁকে গেছে এখন তো আমরা বন্ধু হইতে পারি। আচছা থাক। তোমার জুতা পছন্দ হইছে? আমার কপালে দুইটা বারি মারো। তারপর চলে যাও।
নুরি চুপ করে শুনে থাকে। পলাশ মন খারাপ করে উঠে চলে যায় নুরির মনটাও কেনো যেনো খারাপ হয়ে যায়। কেনো?!
পলাশের কথা শুনে?! নুরি জুতা রেখে চলে গেলো। পলাশ তখন অন্য কাস্টমারকে জুতা দিচ্ছে।!
-কিরে কোথায় ছিলি? ফোন ও ধরিসনা?
-কিছুনা। কখন যাবা? চলো।
-তোর যে কিহয় মাঝে মাঝে গড নোস।
–
বাসায় আসে ঠিকি। কিন্তু মনটা পড়ে থাকে জুতার ভেতর। মানুষের এই হলো এক বদ খাসলোত। যখন একা থাকে তখন অন্য কেউ বা এক্স এসে গুতাইলে সে আন্ধা হয়ে যায়। গুতানি খেতে আরো মন চায়। নুরিরও সেই অবস্থা। পলাশ কি আসলেই ভালো হয়ে গেছে? ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল ও তো হতে পারে। কিন্তু এখন নুরি আবেগে বানভাসি। আন্ধা। কিছু দেখতে পায়না। পলাশ আর তার কথা চোখের সামনে নাচতেছে।!!
ফেসবুক এ্যাকাউন্ট ডিএক্টিভ। ফেন নম্বর টা চেন্জ। তাই কারে সাথে যোগাযোগ নাই। নুরির কিছু ভালো লাগেনা। ঘুম আসেনা। অতি কষ্টে রাতটা কাটায় দিনটা কাটায়। দুইদিন এইভাবে যাওয়ার পর নুরির মুখ পর্যন্ত কিডনি চলে আসে।! এইবার আর থাকতে পারেনা।
-জুতা কিনুম জুতা।
-কিসের জুতা?
-ফুপি ওই জুতা আমার এখনি লাগবে। আমি আসতেছি।
ফুপি বেকুপের মতো চাইয়া থাকে।কোন জুতা?
নুরি দোকানে ঢুকে।
-ম্যাডাম কিছু খুঁজছেন?
-হ্যাঁ হ্যাঁ জুতা জুতা।
-কোনজোড়া?
-প… পলাশ ছেলেটা কই?
-সরি ম্যাম এখানে পলাশ নামে তো কেউ থাকেনা।
-ওহ….
-ম্যাম কোন জুতে জোড়া?
নুরি জুতা কিনে এদিক ওদিক তাকিয়ে চলে আসে। পলাশ কই? আজকে পলাশের জন্য এসেছিলো নুরি?!
“আমি একটা হারামী। পলাশের সাথে আমার ব্রেকাপ হইছে। অনিকের সাথে আমার বিয়া হইছে। অনিকরে ছাইড়া দিছি এখন পলাশের পেছনে দৌড়াইতাছি। অনিক আমার পেছনে দৌড়াইতাছে।
কি হইতেছে এইগুলা? পলাশের নাম মুখপ আনবি তে থাপ্রায় দা্ত ফেলায় দিমু শয়তান।” নিজেকে নিজে বকতে বকতে বাড়ি আসে। মুড অফ। মেজাজ খারাপ।
কানাডা যাবার ব্যবস্থাটাও হচ্ছেনা ডিভোর্স ও নেয়া হয়নি। জীবন যেনো গেবন হই গেছে। নুরি একাউন্ট একটিভ করলো। কিছুক্ষন পর মেসজ হুমরি খেয়ে ম্যসেন্জার টা একেবারে ফুল করে দিলো। কি জ্বালা! এতো ম্যাসেজ পড়া যায়? নুরি একটাও পড়লোনা।
দুদিন পর আবার গেলো দোকানে।
জুতা কিনবে।
-ম্যাম কিছু লাগবে?
নুরি কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে,
-না
বলেই চলে যায়। দরজা থেকে বের হয়েই দেখে পলাশ দাঁড়িয়ে কফি বা চা খাচ্ছে।
নুরি থতমত।
-কফি?
-খাইনা। পথ ছাড়ো।
-চলো।
-সর বাল।
-যা ভাগ।
–
–
চুপচাপ দুজনে হেঁটে হেঁটে কফিশপে যায়। বসে কফি খায়। দুজনেই বোবা। প্রায় আধা ঘন্টা পার হবার পর পলাশ জিজ্ঞেস করে,
-অনিকের প্রবলেম কি ছিলো?
নুরির বুকটা ছ্যাৎ করে ওঠে।
-যন্ত্র বিকল?
-দুর শয়তান। আজেবাজে কথা বললে ফাটাই দিমু।
-আর ফাটাইতে পারবিনা ভাবী মামু বানাইতে পারলিনা।
-এ বাল, তুই কি আমারে পঁচাইতাছস?
-না। জিগাইতাছি কি হইছে? দেবর তোর আমি আমারে কইতেই পারস।
-জুতার বারি তোর কপালে।
-দে দে। ভাবীর হাতে জুতা খাইতেও সুখ আছে।
নুরি হেসে ফেলে।
পলাশও হেসে ফেলে।
এই হাসিই তো ফাসাই দেয়।
কেবল তো শুরু।
আব তেরা কেয়া হোগা? অনিক-নুরি-পলাশ?
–
-অনিকের প্রবলেম আছে এটা আমি আগেই বুঝেছিলাম। তুই বিয়েটা এইভাবে না করলেও পারতি। এতো জেদ তোর।
-দেখ জ্ঞান দিবিনা একদম। আমি কি এখন বিয়ে করার আগে পরীক্ষা নিব নাকি কার প্রবলেম আছে আর কার প্রবলেম নাই? আজিবব!!
-না সেটা না। আমার কি প্রবলেম ছিলো তবে…
আচ্ছা সে যাক। তুই এখানেই থাকছিস তাহলে?
-হু।কিন্তু তোর বাসা তো এখানে না তাইলে তুই কি করস?
-আমি এইখানেই থাকি। ওই দোকানটাতে আছি।
-ইয়াককক তুই এই জুতা বিক্রির কাজ করবি আমি জীবনেও ভাবিনাই।
-এই শোন কোনে কাম ই ছোটো না বুজলি? সম্মান দিতে শেখ।
-আমার এতো সম্মান দেয়া লাগবেনা। তুই জুতা বেচ। আমি গেলাম
-ফোন নম্বরটা দিলিনা তো?
-আ মর। বালডা।
-আমার ফোন নম্বর আগেরটাই আছে ফোন দিস মন চাইলে।
নুরি চলে আসছে আর পলাশ জোরে জোরে বলছে কথাগুলো।
আজকে মনটা ভালো নুরির। কারণ টা জানা নাই। তাই সে ভাবল ম্যাসেন্জারে সবার এসএমএস এর উত্তর দিবে। এক বাটি আইসক্রিম নিয়ে বসল। এবার সে ল্যাপটপ গুতাবে।
সবার এসএমএস এর উত্তর দিচ্ছে দিচ্ছে দিচ্ছে…. অনিকের কোনো এসএমএস নাই। কি আজব?! ছেলেটা ভুলে গেলো? নুরি একটু মন খারাপ করে। অনিক তাকে এসএমএস দেয়নাই একটাও। আদার বক্স চেক করে নুরি। মনটা তার খুব খারাপ।
সব টেক্সট চেক করে সে। একটা টেক্সট এ গিয়ে আটকে যায় নুরি।
-“নুরি আমি তোমার শিমুল ভাইয়া। অনিকের কাজিন। তোমার সাথে কথা বলতে চাই। আমি কলকাতায় থাকি।”
নুরির এবার টাসকি খাবার পালা। শিমুল কে সে চেনেনা নাম ও শুনেনাই। অনিকের কাজিন কিনা সেটা চেক করার জন্য শিমুলের প্রোফাইল ঘাটে সে। ঠিকি শিমুল আর অনিকের পিকচার। রিসেন্ট। ওহ হো দ্যাট মিনস কাউয়ায় এহন কলকাতায়?! খুব মজা করা হচ্ছে না?
নুরু বিরবির করে বকে!!!! আর রিপ্লে দেয়।
-অনিকের সাথে আমার কেনো রিলেশন নাই।
নেট কানেকশন অফ করে দেয়। মুডটাই অফ হয়ে গেছে। মেয়ে মানুষ বড় আজিব চিড়িয়া! পলাশের সাথে কথা বলে তার খুব ভালো লেগেছে। অনিক টেক্সট করেনি বলে মেজাজ খারপ হয়েছে। আবার অনিক কলকাতায় ঘুরতে গেছে দেখেও ওর মেজাজ খারাপ হয়
রাত তখন ৩ টা নুরি পলাশের নাম্বারে ফোন দেয়। নুরির এটা নতুন নম্বর পলাশের চিনতে পারার কথা নয় যদিও।
-আমি তো জানতাম বেবি তুমি ফোন দিবা তোময়র জন্যই ওয়েট করছিলাম
-হারামী তুই চিনলি কেমনে? মাইয়া ময়মুষের সাথে কথা বইলা বইলা অভ্যাস হই গেছে তোর?
-সারাজীবন আমারে খারাপ ই ভাবলি তুই।
-দুর হ শয়তানডা
নুরি ফোন কেটে দেয়। কি করতেছে সে? আসলে সে কি চায়? সে নিজেও মনেহয় জানেনা। পরদিন আর কোথাও যায়না বাসায় শুয়ে বসে কাটায়। কিন্তু এইভাবে তো চলতে পারেনা। সব নাটকের ই শুরু যেমন। আছে শেষ ও তেমনি আছে। দুনৌকায় পা দিয়ে কি চলা যায়? নুরি অস্থির হয়ে থাকে।শান্তি নাই ওর। আবার সে শিমুলের সাথে যোগাযোগ করে।
-অনিক কি আপনাকে বলেছে আমার সাথে যোগাযোগ করতে?
রিপ্লাই নাই।
-অনিকের সাথে আমার মিউচুয়াল সেপারেশন হয়েছে।
রিপ্লাই নাই।
-অনিক কে আমি ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেব।
রিপ্লাই নাই।
-আপনি রিপ্লাই দিবেন প্লিজ।
নুরি মশার মতো বেদিশা খেয়ে উড়ে বেড়ায় একবার পলাশ একবার অনিক….
নুরি এবার তুমি কি করবে মনা?
–
-অনিক দেখ দেখ।
-কি?
-দেখ তোর নটাঙ্কি বউ কতগুলা এসএমএস করছে।
-কই দেখি
-দেখ। কি কমু? আমি তো কলকাতায়।
-ভাই তোরে টিকিটট কইরা দেই তুই যা।
-আমার অফিস কি তুই করিবি?
-প্লিজ। বউ আমার না থাউক খালি ওরে সত্যি কথাগুলা বলার দরকার।
-কি?! আমি বলমু? তোর সমস্যা? তুই ভয় পাস?
-না মানে…
-আমি ওরে এইটা বলতে পারি তোর সাথে যেন সে কথা বলে। বাকিটা তুই সামলা।
-আমি?
-বালডা। প্যান্ট টা খোল। তো খোল।
-কেন?!
-তুই পুরুষ মানুষ কিনা এইডা দেখতে মন চায়।
–
-এখন কি রিপ্লাই দিয়াম নটাঙ্কি ভাবিরে?
-এই বেটা কামলা মুখ সামলা। অভদ্র ইতর।
শিমুল মুখ বাঁকিয়ে ম্যাসেন্জার এ ঢুকে। নুরির এসএমএস দেখে হাসে। তার মানে বেচারূ এখনো অনিককে ভালোবাসে। একটু বাজিয়ে দেখলে ক্ষতি কি?
-কেমন আছো? আমি তোমার এসএমএস দেখিনি। অনিক আমার এখানে এসেছে অনেকদিন ই হলো। তুমি চলে যাবার পর পর ই।
আমাকে কিছু বলেনি ও। গতকাল আমি একরকম জোর করেই শুনলাম। কি হয়েছিলো। তোমাকে নক দেয়ার কারণ হলো, তুমি ওকে ভুল বুঝেছো। তোমাকে রিকোয়েস্ট করার জন্য না এটা বলব যে অনিকের নরমালি কোনো প্রবলেম নাই। ওর ছোটোবেলায় একটা অসুখে অপারেশন হয়েছিলো পুরুষাঙ্গে। তাই সে ফিজিক্যাল ব্যাপারটা ভয় পায়। এটা জাস্ট একটা ভয় আর কিছুনা। শুনলাম তুমি ডিভের্স তখনি দিতে অনিকের রিকেয়েস্ট এ দাওনি। অনিক ইউ কে তে চলে যাচ্ছে। ও জব পেয়েছে ওখানেই।
আমার শালীর সাথে ওর বিয়ে দেবার কথা ভাবছি আমরা। তুমি ডিভোর্সের জন্য রেডি থাকলে কাজটা সেরে ফেলব। জানিও কি করবে ভালো থেকো।”
যাহ শালা!!! এমন টোপ যে দিলাম হয় নুরি এই টোপে গলায় আটকে এইদিকে চলে আসবে নয়তো একেবারে চলে যাবে।
-এই কাজটা মোটেও ঠিক করিসনাই।
-এই ব্যাটা তুই কি কানতাছস? নু* তো কান্দোন আসলেও হইতো চোখে না আইসা। তাইলে বউ পালাইতোনা একদিনের বউয়ের জন্য এতো হা হা করে লাভ নাই। আমি তো জাস্ট একটা টোপ দিলাম।
–
অনিকের মাথায় ঠাডা ফেলেছে শিমুল নুরি তো এবার লাফাইতে লাফাইতে পালাবে। এতোদিন তবু বউ তো ছিলো.. আহারে অনিক আহারে সিক্সপ্যাক প্যাক প্যাক প্যাক…
–
সকাল বেলাতেই পলাশ ফোন দিয়েছে।
-হ্যালো…
-ও বেবি তোমার কন্ঠ শুনলে আমি তো খাড়া হয়ে যাই।
-এ হারামজাদা সকাল বেলা কি হাগতে বইছস? পানি কম পড়ছে?
-দিলি তো মুডটা নষ্ট করে আজকে আমার বার্থডে। কেএএএএএএএউ উইশ করলনা
-হ্যাপি বার্থডে।
-বেবি তুমি রেডি হও আমি তোমাকে নিয়ে আজকে খাব।
-বালডা,মর। সকাল বেলা হেতে আইছে খাওয়াইতে। এ শোন বাসায় খাবার আছে অনেক তুই খা।
– ভালো করে কথা বলতে কি টিয়া লাগে?
-ভাইরে এট্টু ঘুমাইতে দে। আমি তোরে ফোন দিমনে। রাখ এখন
নুরি ফোন রাখে। আবার ঘুমায়য়। ঘুম ভাঙে সকাল ১০ টায়। উঠেই এক কাপ আদাপানি খাওয়া তার অভ্যেস।একটু ব্যায়াম করে ফ্রেশ হয়ে এসে ফোনটা চেক করে। বাপস….. পলাশের এসএমএস এর বন্যা।
ওহ হো ওর তো আজকে বার্থডে তো।
-হ্যালো বেবি। আম ওয়েটিং ফর ইউ।
-বালডা। তোরে উইস করছিলাম না?
-হু। আসবানা?
-কই?
-খাওয়াবো
-কি?
-আরে দুর আমি কি সেরকমছেলে নাকি।আমি তো ভালো ছেলে। রেস্টুরেন্টে খওয়াব। লান্স। আসবি? আয় না প্লিজ…
-দেখি
-প্লিজ আসবি। কোথায় খাবি বলিস।
নুরিফোনটা রেখে ভাবছে… কি করব? যাব?
নাহ…
আচ্ছা গেলেই বা কি? ও তো আমার একসময় ফ্রেন্ড ছিলো তো!! আর বয়ফ্রেন্ড?! সেটা তো…. আচ্ছা ছিলো তো ছিলো তাতে কি
মেয়েমানুষ! যে এক্স হইলো তারে এখন ফ্রেন্ড ভাবতেছে
নুরি সেজেগুজে শাড়ি পড়ে গেলো।একটা গিফ্ট ও কিনলো।একটা ঘড়ি।
-কই তুই?
-বেবি আমি তো রাস্তায় জ্যাম পড়েছে। আসতেছি।
– তোরে ২ মিনিট সময় দিলাম। এর মধ্যে না আইলে আমি যাইতাছি বাড়ি।
-বেবি আমি দৌড় দিলাম আসতেছি প্লিজ দাঁড়াও।
পলাশ দৌড়ে দৌড়ে আসে।
১০ মিনিট পর।
গালাগাল খেয়ে ঝগড়া করে দুজনে গিয়ে বসে রেস্টরেন্টে। খাওয়ার পালা শেষ। এখন নুরির মুড বেশ ফুরফুরা।!
-তোর জন্য এইটা নিয়ে আসছি।
-আরে বার্থডে তো তোর। আমার জন্য কেনো? আমি তোকে দেব।
-তোকে কিছুই দিতে পারিনি। হয়তো….ভালোবাসাটুকুও না।
নুরি এবার একটু কেমন হয়ে যায়…
-তবে…নুরি তুই চলে যাবার পর বুঝেছি তোকে কতটা ভালোবাসি। না না ভয় পাসনা। আমি তো শুধু এক্সপ্রেস করলাম। চাইনি কিছুই। তোর জন্য আমার ভালোবাসা সারাজীবনের জন্য। তোর উপকার যদি কোনোদিন করতে পারি আমার ভালো লাগবে। এটা কিছুই না সামান্য একটা গিফ্ট। বাসায় গিয়ে খুলিস। নুরি চুপচাপ নেয়। ওরটাও দেয়। টুকটাক কথা বলে চলে আসে। কেমন যেনো ভার হয়ে আসে সময়টা।
বাসায় এসে নুরি শুয়ে শুয়ে ভাবে আর ফোন নিয়ে নাড়াচাড়া করে। গিফ্টটা খুলে সে। একটা আংটি।!!একটা চিঠিও!!
“তোকে কখনো ভালে কিছু দেইনি। কষ্ট ছাড়া। এটাও ভালো কিছুনা। না পড়িস ফেলে দিসনা। সাথে রাখিস তাহলেই হবে। আমাকে ক্ষমা করিস…”
নুরি আংটিটা হাতে নিয়ে থাকে। কেমন যেনো লাগে। পলাশের সাথে সম্পর্কটা কখনোই মধুর ছিলোনা। শারীরিক একটা টান আর ফাইজলামি আর কিছু না। কিন্তু এখন কেনো ওর জন্য খারাপ লাগছে এইভাবে অন্য কোথাও বিয়ে না করলেও হতো একটা ইমপোটেন্ট কে বিয়ে করলাম পলাশের সাথে কি আবার সব ঠিক করা যায়?
এসব ভাবতে ভাবতে সে বসে থাকে নেটে ঢুকে। নেট অন করতেই পুটুং পুটুং শব্দ করতে করতে ফোনটা অস্থির।
ম্যাসন্জারে ঢুকে। গতকাল থেকে দেখা হয়নি ফোন।
-পিইইই……ও পিইইইই….
-মুতবি?
-না। তুমি কি মুতু করে ফেলেছো? এমন করে বসে আছো কেনো?
নুরি শকড হয়ে বসে আছে। শিমুল যে কথা বলেছে তাতে শলড না হয়ে আর কি হতো?
-অনিক বিয়ে করবে? বিয়ে? অনিক হারামী সমস্যা নাই তাহলে বললি না কেন? বউ রেখে আরেকটা বিয়ে? ফুপিইইইইইইই….
-কিরে কি হয়েছে? নুরি?!!
-আ আ আ আ আ আ
-কানছিস কেনো বলবি তো?
নুরি ঘরময় ছুটোছুটি আর লাফালাফি করে। ইইইইইইইই।।।।। নুরি রাগে দুঃখে লাফাচ্ছে।কি করবে সে অনিকের জব হয়েছে? ইউকে তে? বিয়ে করবে অন্য কোথাও?
না এটা কিছুতেই হতে পারেনা। অনিকের বউ তো আমি আমি আমি!
চলবে….
–
নুরি, তাহার অবস্থা এখন এটা নেব না ওটা নেব। আহারে!!!
পলাশ বারবার ফোন দিচ্ছে। নুরি ফোন এর দিকে তাকিয়ে আছে। এসএমএস আসছে অনেক।
-নুরি, ফোন ধরো না কেনো? বড় ভাইয়া এসেছে। দেখা করবা? ফোন ব্যাক করিও।
- বড় ভাইয়া টা কেডা?
নুরি পলাশের প্রতি দুর্বল হয়ে গিয়েছিলো কিছুটা পলাশ তো আগে থেকেই পড়ে আছে। তাই কি বড় ভাইয়ার সাথে দেখা করাতে চাচ্ছে।?! নুরি ফোন রিসিভ করে এবার।
-কিরে কি হয়েছে? ফোন ধরো না কেনো?
-কি হইছো বালডা এতো ফোন দিয়া কি তোর?
-ভাইয়া আসছে। আজ দুপুরে একসাথে খাইতাম।
-আমি যেতে পারবনা, কাজ আছে।
-চেষ্টা করিস।
-তুই এইরকম একবার তুই একবার তুমি করছিস কেনো রে? কি সমস্যা তোর?
-কই নাতো আচ্ছা সরি। তুই পারলে আসিস। কেমন?
নুরি ফোন টা রেখে চুপচাপ বসে থাকে।
সকাল তখন ১০ টা। দিন তার এই দুই নৌকা নিয়ে টানাটানি করেই চলে যায়। বসে বসে এটাই ভাবে।
-পিইইইই…
-মুতবি?
– না ও পিইইইইই তোমার জন্য একটা পার্সেল আসছে।
-তোমার ফোন এসেছে।
নুরি উঠে যায় দরজায়। বাসার ল্যান্ডলাইন ফোন এসেছে।
-হ্যালো।
-আমি নুরে জান্নাত তাহান্না বিনতে রিদোওয়ান?!
-জ্বি।
-একাই তো সব নাম নিয়েছেন।!!
-কি সমস্যা?
-সরি ম্যাম। আপনি একটু ইজুকেশন অফিসে আসবেন। আপনার স্কলারশিপের ব্যাপারে।
-ওহ সরি। ওকে। কখন?
-৪ টার মধ্যে।
-থ্যাংস।
নুরি অনেক খুশী মনেহয় স্কলারশিপ পেয়েই যাবে এবার।
ফুপিইইইইইইইই…….
-কিরে কি হলো?
-ফুপি দোয়া করো যেনো আমার স্কলারশিপ টা হয়ে যায়। অফিস থেকে ফোন দিয়েছিলো।
-তাই!!! হয়ে যাবে।দেখিস….
নুরি তো মহা খুশী। ৩টার দিকেই সে বের হলো। জ্যাম শুরু হইছে। দুপুর বেলাতেও এতো জ্যাম থাকে?! উহহহহ অসহ্য!!!
এতো জ্যাম ক্যারে?! ঢাকা শহরটা দিনদিন বসবাসের দারুন উপযোগী হয়ে গেছে। মানুষের জন্য না। যানবাহন আর মশা মাছির জন্য। নুরি রিকশা থেকে নেমে পড়ে।হাটতে থাকে। জ্যামের বংশধর যেখানে শেষ সেখানে গিয়ে যেকোনে একটা বাসে উঠবে ওই রুটের। হাঁটছে হাঁটছে এমন সময় কিছু হিজড়া সামনে এসে নুরির পথ আটকে দিয়েছে
-এ্যাই দে না ড়ে দেনা…(clap )
নুরিকে ওরা দুইজন ঘিরে ধরে দাঁড়িয়েছে। নুরির অবস্থা কাঁদো কাঁদো। হিজড়া গুলো এতো মেকাপ করেছে।ছিহ পুরুষ মানুষের মতো লাগছে।ওদের হাতের তালি আর পুরুষের মতো কন্ঠ শুনে নুরি তো কেঁদেই দেয়। পুরো ১০০ টাকা নিয়ে রাস্তা ছাড়ে। রাগে দুঃখে ফেটে পরে নুরি। এগুলা এতো খারাপ কেনো? আজকাল নাকি আবার ছেলেগুলাও হিজড়া সাজতেছে
কত ঝক্কি ঝামেলা করে শেষ পর্যন্ত এসে পৌঁছালো। কষ্ট টা সার্থক হলো নুরির। হুমমম সে স্কলারশিপ পেয়েছে।
ইয়ো ইয়ো…. নুরি ওখানেই আঙুল বাঁকায়। সবাই দেখে হেসে ফেলে। কি আজিব চিড়িয়া হয়ে গেছে আজকালকার মেয়েমানুষ!!
রিকশাওয়ালা গুলো এখন বদশাহে শাহেনশাহ!
-এই মামা যাবেন?
মামা ফিরেও তাকায়না যেনো কেউ যেনো ডাকেইনাই। বহু কষ্টে একজন রিকশাওয়ালা রাজি হলেন।আজ শুক্রবার তো এজন্যই এদের এতো বেশি ডিমান্ড। আবার জ্যাম শুরু হয়ে গেছে
-নুরি!!
কে ডাকে?
-নুরি, কোথায় যাও?
আরে!! পলাশ যে!!
-কিরে তুই এনে ক্যা?
-ওই তো এমনিই আরকি….
-এমনি মানে? তোর ভাই কই?
-আরে হ্যাঁ ওই জন্যই তো আসছি। ভাই আসছে তো। জ্যাম এ বসেই আছিস।
-তো?
-চল নাহয়… ভাইয়ের সাথে দেখা করবি।
নুরি কিছুক্ষন চুপ করে থাকে। বিশাল জ্যাম আধা ঘন্টা মিনিমাম তে লাগবেই।
নেমে যায় নুরি।
দুজনে রেস্টুরেন্টে বসে আছে।
-কিরে তোর ভাই কই?
-আসতেছে। তুমি কি খাবা বলোনা জান।
-জান?!!!!! এউ তুই কস কি এডি?
-ওহ সরি। তুমি তো এখন অন্য কারো। পুরোনো অভ্যেস তো…. সরি
–
-ভাইয়া এসে গেছে।
একজন শার্ট প্যান্ট সানগ্লাস পরা লোক এসেছে। নুরিদের সামনে এসে বেশ পার্ট নিয়ে সানগ্লাসটা খোলে। ওমা!! তারপরেই লোকটা কেমন ফ্যাকাসে হয়ে যায়। নুরি সালাম দেয়। ভাই বসে কেমন কাঁচুমাচু করেন।
-আচ্ছা এই লোকটাকে কোথায় দেখেছি? চোহারা টা এতো পরিচিত লাগছে কেনো?
ভাইয়া আপনাকে কি কেথাও দেখেছি আমি?
-আমাকে??? কি যে বলেন আপা?
-ইয়ে ভাইয়া নুরি তো তোমার ছোটো ওকে নাম ধরেই ডাকো।
পলাশ গুতায় ভাইটাকে। ভাই কিছুক্ষন পর নুরির প্রশংসায় পঞ্চমুখ। নুরি তো অস্বস্তি তে ভোগে।
–
নুরির মনটা ভিষনরকম ভালো। সে তো স্কলারশিপ পেয়েছে।✌ সবার সাথে গল্প করে রাত ১১ টায় বিছানায় যায়। উহহহ যা একটা দিন গেলো রে বাবা… একটু ফেইসবুক এ ঢুকলো। এমন সময়ে পলাশের ফোন।
-নুরি, কেমন লাগলো ভাইকে?
-ভালো না। কেথায় যেনো দেখেছি তাকে।
-কি বলো তুমি? আরে না। তোমার অনেক প্রশংসা করছেন। সত্যি…নুরি…
-হুমমম।
-কাল দেখা করা যাবে?
-না।
-প্লিজ…
-আচ্ছা, দেখি।
নুরি কেমন উইক হয়ে পড়ছে। উদাস নুরি ম্যাসেন্জার এ ঢুকে। শিমুলের বা অনিকের কি কোনো ম্যাসেজ এসেছে?
না…..
নুরি অনিকের টাইমলাইনে ঘুরতে যায়। একটা মেয়ের সাথে তার পিক। হাত ধরে।
ক্যাপশন দেয়া…
my beloved
আর কি মাথা ঠিক থাকে?! কিছুক্ষন পর শিমুল অনলাইন। কি করা যায়? ফোন দেয়া যায়? নুরি শিমুলকে ফোন দেয়।
-হ্যালো।
-কেমন আছেন ভাইয়া?
-এইতো ভালো। তোমার কি খবর?
এই অনিক্কা তোর বউ, ফোন দিছে রে।
অনিক তো দৌড়ে আসে।
-ভাইয়া অনিক কি বিয়েতে রাজি?
-কোন বিয়ে?
-কোন বিয়ে ই তো? ওহ হো….আমার শালীর কথা বলছ?
-হ্যাঁ। হাত ধরে পিক তুলছে না? অনিক কই?
-ও তো ডেটিংএ।
-কি?! আমার কিন্তু হার্টের প্রবলেম আছে ভাইয়া
-আহারে!! কিন্তু অনিক তো ইনটেক মাল ছিলো।
-কি?!
-যাই হোক ভালো আছো?
-ভাইয়া প্লিজ অনিকে বিয়ে দিবেননা।
-আরে ইসলামে চারটা বউ রাখা জায়েজ আছে। তুমি বড়কি আর আমার শালী হবে ছোটকি।
-কি?!
ফুপপিইইইইই।
এ এ এ এ এ😭😭😭
–
নুরি এখন কি করবে? অনিকের কাছে যাবে? অনিকের নাকি কোনো প্রবলেম নাই। কিন্তু অনিক কি তাকে মেনে নেবে? সে তো আরেকটা বিয়ে করতে যাচ্ছে। মামলা করব মামলা।
পলাশ?
পলাশ বালডার কিচ্ছু নাই। পিনাটলুল। জুতা বেঁচে। নাহ এইডা বাদ।
নুরি স্কলারশিপ এ চলে যাবে।
তা নাহয় গেলাম কিন্তু অনিক যে বিয়ে করছে?
নুরি অনিকের নম্বরে ফোন দেয়। ফোন তো অফ। কারণ সে তো দেশের বাইরে। আর তো কারো নম্বর নাই। এখন? অনলাইনেও নাই শিমুল ভাই।
ফুপিইইই….
-কিরে কি হয়েছে তোর কাঁদছিস কেনো রে?
-অনিকের কাছে যাব।
-কি?!
ফুপির মাথায় দশ কেজি ওজনের একটা ছোট্ট বজ্রপাত ঘটে। ফুপি কিছু বলতে যাবে এমন সময় দরজায় কলিং বেল বাজে।
কে এলো? ফুপি উঠে গেলেন। দরজা খুলে নুরি কে ডাকলেন।
-নুরি, নুরি…. এদিকে আয় একটু। কে এসেছে দেখ তো।
নুরি চোখ মুছে ওঠে। কে এলো? দরজার কাছে গিয়ে তো চক্ষু চরকগাছ!!
-আপনি? তুই?
-এই এলাম আরকি। ভাইয়াকে নিয়ে এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম।
-বাসার ঠিকানা কই পাইছস?
-তোর সাথে ওইদিন হাটলামনা?
-তুই আমারে ফলো করছস? বালডা
-ছিহ এসব কথা বলতে হয়না। ভেতরে আসি?
পলাশ তার সেই ভাইকে নিয়ে এসেছে। সোফার পায়ের ওপর পা তুলে বসেছে। কেমন মেয়েদের মতো।!!
-এ্যাই নুরি বসো না।
নুরি তার সুন্দর মুখখানা এমন ভাবে বাঁকায় যেনো তার কষাগা ধরেছে।!
-না মানে বলছিলাম বসো।
নুরি বসে। ফুপি তো চুপি হয়ে গেছে। কিছুই বুঝতে পারছেনা।
-ফুপি এইডা পলাশ আমার ফ্রেন্ড। আর ইনি ওর ভাই। আল্লাহমালুম কেমনে বাড়ি পাইলো। নাস্তা দেও।
-নুরি তুমি খুশি হওনাই?
-ক্যা? খুশি হমু ক্যা? তোর বিয়া?
-ইসসসস তোমার মুখ আর তুমি!!
-কি হইছে?
-বললাম তোমার মুখ আর তুমি জাস্ট অসাম।
-ভাইয়া তুমি বলোতো ঠিক বলছি কিনা…
-একদমমমম নুরি কিন্তু জাস্ট ওয়াও একটা মেয়ে।
নুরি এইবার বলে,
-আপনাকে কোথায় দেখছি? বলেনতো।
-আ আ মাকে জানিনা তো।
পলাশ মাঝখান থেকে বলে ওঠে,
-আরে না। ভাইর চেহারা এমন ই যে ই দেখে সে ই বলে কই যেনো দেখছে।
নাস্তা খাইয়ে নুরি ওদের বিদায় করে দেয়। ভাই টা কে কই যে দেখছে ইসসসস মনেই পড়েনা!!!
–
-তুই নুরির পিছে লাগলি কেন? এই মেয়ে কি পরিমান ডেন্জারাস! আমাকে চিনেই ফেলবে। শেষে আমি খাই প্যাদানি।
-আরে না কিছু হবেনা।
-তুই বললে হবে? শালা দুইন্যাতে মাইয়া মানুষের কম পড়ছে?
-নুরি তো একটাই। একটা মাল রে মাল। ওরে এইবার খাইয়া তারপর ছাড়ুম। বহুত অপমান করছেরে। শালী। একবার পাখি ধরা দিক তারপর শুরু হবে প্রেমলীলা।
হে হে হে। ওর বাপের অনেক টাকা। ইসসস বিয়াও যদি করতে পারি। জুতা আর বেঁচতে হবেনা। সারাজীবন ঘরজামাই হইয়া থাকুম আর বিড়ি ফুকামু হে হে হে।
-দোস্ত আমারে সাথে রাখবিনা?
-দুর বেটা।
–
নুরি মাথাটাকে ঝাঁকায়। উপরনিচ ডানবাম।
-পিইইইইই…!!! কি হয়েছে তোমার? এমন করছ কেনো?
-যা আগে মুতে আয়।
-আমি মুতু করেছি। তুমি কি করছো?
-মাথা থেকে ইনফরমেশন বের করছি।
-কিসের?!-চুপ চুপ….
-তুমি না একেবারে ছেলেমানুষের মতো করছো। ওই যে জেমস এর মতো হি হি হি। তোমাকে এখন পান্জাবি মেকাপ করাই দিলে ছেলেমানিষ ই লাগবে হি হি হি….
নুরি চুপচাপ ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ চোখ গুলোকে বড় বড় করে ওকে দৌড়ে গিয়ে চিপ্পে ধরে।
-তুই আইজ আমার কোলে পি কর।!! পেয়ে গেছি পেয়ে গেছি… উল লা লা লা…. পেয়ে গেছি। ঢিংচাক ঢিংচাক ঢিংচাক লে লে লে পি পি পি….
ছোট্ট মেয়েটা এইসব দেখে সত্যিই মনেহয় পি করে দেবে ভয়ে। দৌড়ে যায় মায়ের কাছে। কি পেলো নুরি?!
-বেটা তুই নুরিরে ঘোল খাওয়াও? হিজড়া সাইজা টাকা নেও আবার ভাই সাইজা বাসায় আসো। জুতাবেচা পলাশ তুই ভালো হইলিনা। নুরির সাথে দুইনাম্বারি? এইবার দেখবা মজা ই মজা…
-নুরি তোর ফোন….
শিমুল নামে কেউ একজন ফোন দিয়েছে…
শিমুল?
নুরি দৌড়ে গিয়ে ফোনটা ধরে।
-হ্যালো কে?
-নুরি আমি তোমার শিমুল ভাইয়া। শোনো অনিকের বিয়ে। তোমার দাওয়াত রইলো। রাখলাম। বাই।
-কি?!!!!!!
নুরি তব্দা খেয়ে গেছে। কি বলল কি শুনল সেটা বুঝতে কয়েকমিনিট সময় লেগেছে।
-ফুপিইইইই… আমি এক্ষনি যাব যাব যাব…টিকিট কাটো কাটো কাটো। এ এ এ এ
–
নুরির আম্মা আব্বা অনিকের আম্মা আব্বা সবাই এসেছে। অনিকের বিয়ে অথচ কেউ জানেনা?
নুরির মা আর অনিকের মা তুমুল ঝগড়া করছে।
-আমনের পোলায় কি বালো? আমার মাইয়া বইলা আছে বুচচেন?
-এই শুনেন আমার প্রথম থেকেই মনে হইছে এই মেয়ে সংসার করবেনা।
-কি? এই শোনেন আমনের পোলারে তো মাইয়া বানাই রাকছেন।
উহহহহ তোমরা কি শুরু করছো? এ্যা…..
অনিকের কাছে যদি আজকেই না নিয়া যাও সবাইরে মাইরা ফেলব।
এ কি আজব কাহিনী? স্বামীর বিয়ে?
অনিকের বাবা নুরির বাবা মুখ গম্ভীর করে ছিলো। কারো মুখে কোনো কথা নাই। নুরি ভে ভে কান্না দেখে দুজনে হেসে ফেলছে। সামলে নিয়ে অনিকের বাবা বলল,
-আমার ছেলে হয়ে যে এমন কাজ করছে সে আমার ছেলে না। আমি ওকে চিনিনা।
এই কথা শুনে নুরি আরো এক ডিগ্রি চড়া আওয়াজে আআআআআআআআআ শুরু করে দেয়।
-আচ্ছা ঠিক আছে। আমার ই ছেলে।
-আব্বু….
–
-শ্বশুর আব্বু আপনি আপনার ছেলের কাছে তার ওয়ান এন্ড অনলি বউকে নিয়া যান। আআআআআআআআআ
–
-বাবাআআআআআআআআ আমাকে আমার জামাইটার কাছে দিয়াসো। আআআআআআ
–
–
সবাই হতভম্ব মাননীয় স্পিকার হয়ে গেছে। তাই অনিকের সেকেন্ড বিয়া খাইতে সবাই যায়।
নুরিও যায়, স্বামীর বিয়া খাইতে। সবাই মিলে শিমুলের বাড়িতে এসে গেছে। বাড়িঘর এমন জাঁকজমক করে সাজানো যে নুরি সারা রাস্তা এএএএএএএএ করলেও বাড়ির সামনে এসে চুপ মেরে গেছে। এতক্ষন সত্যিকারে কান্নাটা আসেনি। এখন এসে গেছে সুন্দর মুখকানা থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। আহারে!!!!!
নুরি গাড়ি থেকে পারলে ঝাঁপিয়ে নামে। এক দৌড়ে গিয়ে বাড়ির ভেতর ঢোকে। ওমা!! সবাই ব্যস্ত। কেউ ওর দিকে তাকাচ্ছে না।!!
-অনিক কই অনিক? শুনেনা অনিক কই? বলেননা…
-ওই রুমে…..
নুরি দৌড়ে গিয়ে রুমের সামনে দাঁড়ায় খুব সংকোচ নিয়ে দরজা খুলে শিমুল অনিককে শেরওয়ানি পড়িয়ে দিচ্ছে।!!
-ভাই আজ তোর জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন তোর সেকন্ড টাইম বিয়া। আইজকা ফেল মারিসনা। আমার মেহনত বেকার যেনে না যায়। আইজকা থাইকা শুরু করে নয়মাস পর জুনিয়র অনিক যেনো দেখি মেহনতের ফলস্বরূপ।
-দুর বেটা। নয়মাস ওয়েট করার মতো টাইম নাই। কাইলকাই পাবি।
–
-এইবার তোর বউ তোর মনের মতো হবে দেখিস। কষ্ট দেবেনা তোকে।
-হুম জানি আমি।
নুরি ওদের কথা শুনেএক পা ও এগুতে পারেনা।
-নুরি!!!!!!
-নুরি!!!!!!!
-আরে নুরি, কখন আসছো?
অনিকে কাছাকাছি এসে নুরি বলে,
-আমি বুঝতে পারিনি। চলে এসেছি। এখন বুঝতে পারছি। আমার আসাটা ভুল হয়েছে। আমি চলে যাচ্ছি আমার কোনো আপত্তি নাই। আপনি ভালো থাকেন। নুরি ফিরে আসে। দরজার কাছে সবাই এসে জরো হয়েছে।
নুরির শ্বশুর বলে ওঠে,
-মা, নতুন বউ কে দেখবানা?
নুরির গায়ে ফোসকা পরে যায়। দুই হাতে মুখ ঢেকে কাঁদে। কি লজ্জা কি লজ্জা!!!
উনি নুরির হাত ধরে টেনে নিয়ে যান।
-দেখো এই যে আমাদের নতুন বউ।দেখো কথা বলো।
নুরি হু হু করে কেঁদে ওঠে। সবাই মিলে এতো অপমান?!!
-কি হলো কথা বলো।
নুরি সামনে তাকায়। আরে এ তো সে ই!! সামনে বড় একটা আয়না।আর সেখানে নিজেকেই দেখছে সে।!!” নুরির ভ্যাবাচেকা খাওয়া মুখটা দেখে সবাই হো হো করে হেসে ওঠে।
-বোকা মেয়ে, তুমি আমাদের বউ অন্য কেউ আসতে পারে? তুমি যেতে চাইলেও আমরা যেতে দিতে পারি? আমরা তো একটু ড্রামা করলাম। এবার নুরি লজ্জায় একেবার পারলে মাটিতে মিশে যায়!!
–
ভিষণ হই হুল্লোর করে নুরি-অনিকের সেকেন্ড টাইম বিয়ে হলো কলকাতায়।
বাসর ঘর। নুরি জরোসরো হয়ে বসে আছে! মুখ নিচু করে। অনিক বীরদর্পে এসে ওর কাছে বসেছে। ওর হাতটা ধরে ওকে জিজ্ঞেস করে..
-আজ কি?
নুরি চুপ করে আছে।!!
-কাল স্টাটাস দিবানা?
-কিসের?
-টুডেয় উই আর হেভিং….
নুরি লজ্জায় মুখ অন্যদিকে ঘোরায়।আহা! আহা!
-কাল কেনো আজ ই দেব।
অবশেষে তাহারা জুকারকাক্কুর ফেইসবুকে গলা ধরাধরি করিয়া একখানা সুখময় স্টাটাস দিলো.
today they arer having sex
যাহারা একসময় ভুল করে ভুল বুঝে দুরে সরিয়া ছিলো। আজ আবার তাহারা এক হইয়াছে। দোয়া করবেন সবাই””
স্টাটাস টা সবার আগে কে পড়লো?
কে আবার? পলাশ।
সে এখন ঘুমের বড়ি খেয়ে ঘুমাচ্ছে। আইডি ডিএক্টিভ। এরকম স্টাটাস দেখা তাহার পক্ষে সম্ভব নহে সব প্লান ভেস্তে গেছে।
আহা!! সুখি হোক ভালোবাসা। মনের সম্পর্ক টাই হয়ে উঠুক আসল। এমন কিছু অভ্যেস না হোক যা জীবনসঙ্গীকে কষ্ট দেয়। ভালোবাসা ভালো থাক…. শুভ হোক having sex…