করোনা পরবর্তীকালে বাংলাদেশে বীমাখাতের জন্য কি অপেক্ষা করছে?
আমার আশঙ্কার কথা বলছি-
“করোনা পরবর্তীকালে বাংলাদেশে বীমাখাতের জন্য কি অপেক্ষা করছে”?
বীমা কোম্পানিগুলোর অক্সিজেন হচ্ছে ডেভেলপমেন্ট এবং ডেভেলপমেন্টের অক্সিজেন হচ্ছে আন্ডাররাইটিং ডিপার্টমেন্ট; এই দুই একে অপারের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। করোনাভাইরা
গত সপ্তাহে বিশ্বব্যাংক তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৮% নেমে দুই কিংবা তিন শতাংশ হতে পারে। এখানে অবশ্যই সাভাবিক ভাবে বলা যেতেপারে যে আর্থিকখাতগুলো ব্যপক ঝুঁকির মধ্যে পরতে যাচ্ছে একথা নিশ্চিতরূপে বলা যেতে পারে তার মধ্যে বীমাখাত অন্যতম।
বীমাখাতের অক্সিজেন যেহেতু ডেভেলপমেন্ট সেহেতু ডেভেলপমেন্টের কর্মকর্তা-কর্মচ
করোনা পরবর্তীকালে বাংলাদেশে বীমাখাতে কি প্রভাব পরতে পারে তা নিম্নরূপঃ
১) বাংলাদেশের অর্থনীতিকে মোটা দাগে- কৃষি, সেবা এবং শিল্প খাতে ভাগ করা হয়। বীমাখাতকেও সেবাখাত হিসেবে চিহ্নিত করতে পারি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেব অনুযায়ী, দেশের অর্থনীতিতে এখন সেবা খাতের অবদান প্রায় ৫০ শতাংশ। এছাড়া শিল্পখাত ৩৫ শতাংশ এবং কৃষির অবদান এখন ১৪ শতাংশের মতো। অতএব বুঝতেই পারছেন বীমাখাতের গুরুত্ব।
২) লকডাউনের কারণে বহু মানুষের উপার্জন বন্ধ হয়ে গেছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদ বলেন, গত একমাস অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকায় সেবা খাত ও শিল্পখাত মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে। যদি করনার কারণে লকডাউন দীর্ঘদিন চলে তবে বীমাখাত মুখথুবরে পরার আশঙ্কা করছি। আশা করতে চাই আল্লাহ্ না করুন সেটা হবে না। কেননা প্রিমিয়াম সংগ্রহের হার আশঙ্কা জনকভাবে হ্রাস পাবে।
৩) করোনাভাইরাস বিস্তারের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি কতটা ক্ষতির মুখে পড়বে তার একটি চিত্র দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পর্কে বিশ্বব্যাংক যে ধারণা দিচ্ছে সেটি রীতিমতো আঁতকে ওঠার মতো। বাংলাদেশ আশা করেছিল ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন মাস পর্যন্ত জিডিপি ৮.২ শতাংশ। বিশ্ব ব্যাংক বলছে, এখন একই মেয়াদে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে দুই থেকে তিন শতাংশ। অবস্থা আরো খারাপ হবে ২০২১ সালে। যার ফলশ্রুতিতে অগ্নি-বীমা, নৌ-বীমা এবং বিবিধ বীমার উপর প্রিমিয়ামের সংগ্রহের হার ব্যপক হ্রাস পাবে।
৪) বিশ্বব্যাংকের পরামর্শক জাহিদ হোসেন বলছেন, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় খরচ করার ক্ষেত্রে এখন মানুষ বেশ সাবধান।
অতিপ্রয়োজনীয় জিনিষ ছাড়া এখন মানুষ অন্য কিছু কিনতে চাইবে না। সেথেকে বোঝাই যায় যে মানুষ সহজে নিজ থেকে বীমা পলিসি কিনবে না। তাই এটা সহজেই অনুমেয় যে সামনে বীমাখাতের জন্য কি অপেক্ষা করছে।
৫) বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি বড় শক্তি হচ্ছে ভোক্তা ব্যয়। অর্থাৎ বিভিন্ন খাতে মানুষ যে টাকা খরচ করে সেটার উপর নির্ভর করে শিল্প প্রতিষ্ঠানও টিকে আছে। মানুষ অর্থের তারনায় যদি ভোক্তা ব্যয় সংকুচিত করে তবে শিল্পখাতের উৎপাদন সংকুচিত হবে, বেকারত্ব বাড়বে এবং জীবন নিরাপত্তার জন্য জীবন বীমার পলিসি ক্রয় করার প্রবনতা কমে যাবে।
৬) অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হওয়ার কারণে অনেকেই বাধ্য না হলে বীমা করতে চাইবে না।
“ভোক্তা ব্যয় আমাদের জিডিপির ৬৯%। এই ব্যয় যদি করা সম্ভব না হয়, এই ব্যয়ের উপর নির্ভরশীল যারা আছেন, ছোট উৎপাদক থেকে শুরু করে শিল্পখাতে এবং সেবা খাতে সবাই সংকটে পড়বে বলে আমি আশঙ্কা করছি।” অতএব বুঝতেই পারছেন বীমাখাত কোন দিকে যেতে পারে?
৭) খেয়াল করলেই দেখতে পাবেন “একটা হোটেল রেস্তোরাঁয় গিয়ে সৌখিন খাওয়া-দাওয়া করা, সখকরে রিক্সায় চড়ে ঘুরে বেড়ানো, অপ্রয়োজনীয় কাপড়-চোপড় কেনা, সৌখিন প্রসাধনী কেনা, কক্সবাজারে গিয়ে ছুটি কাটানো – এই বিভিন্ন ধরণের ব্যয় যে মানুষ করে, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস ছাড়া মানুষ কিন্তু এখন আর ব্যয় করতে সাহস পাচ্ছে না,”। অতএব কেউ বাধ্য না হলে কেউ বীমা পলিসি সহসা ক্রয় করবে না।
৮) বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, দেশে প্রায় ৮০ লক্ষ শিল্প উদ্যোগতা আছে। এর মধ্যে ৯৮ শতাংশই হচ্ছে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্প। বাকি দুই শতাংশ শিল্প হচ্ছে গার্মেন্টস এবং ফার্মাসিউটিক্যা
৯) পশ্চিমা অর্থনীতির সাথে বাংলাদেশের ভাগ্যও জড়িয়ে আছে। “আমাদের রপ্তানি বাণিজ্য এবং রেমিটেন্স – এ দুটো জায়গায় আমরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। মূল আমদানিকারক দেশগুলোও করোনা আক্রান্ত এবং সেখানে কর্মসংস্থানে অনেক চ্যালেঞ্জ। সুতরাং এই দেশগুলো খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের চাহিদা ফিরে আসতে সময় লাগবে। ” ফলে আমাদের দেশের গার্মেন্টস খাতের পন্য অর্ডার ঝুকির মধ্যে থাকলেও এটা আশাকরি সাময়িক, আশা করছি সময়ের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।
সেক্ষেত্রে নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলো খুড়িয়ে খুড়িয় হাটতে পারলেও লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর পথচলার গতি ক্রমর্শ দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা করছি। তবে কোন বিপদই স্থায়ীভাবে থাকে না। আকাশের কালোমেঘ কেটে যাবেই তবে যেকোনো ভাবেই হোক বিপদকালিন সময়ে আমাদের বীমাখাতকে টিকিয়ে রাখার সার্থে রাষ্ট্র ঘোষিত প্রনোদনার একটি অংশ যেন বীমাখাতের জন্য বরাদ্দ রাখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এটা আমার আকুল আবেদন। তবে একইসঙ্গে একথাও সত্যি যে, মালিক পক্ষও যেন হাতগুটিয়ে বসে না থেকে, সরকারি প্রনোদনার জন্য অপেক্ষা না করে প্রতিষ্ঠানগুলোর
মোঃ মানসুর আলম সিকদার।
বীমা লেখক।
ভাইস প্রেসিডেন্ট, প্রধান অবলিখক,
রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স কোঃ লিঃ